খুন হওয়া গৃহবধূকে ১৪ বছর পর জীবিত উদ্ধার!

ডেস্ক রিপোর্ট

গৃহবধূ খতিজা খাতুন
গৃহবধূ খতিজা খাতুন। ছবি : সংগৃহিত

নোয়াখালীতে এক গৃহবধূকে ১৪ বছর পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে খতিজা খাতুন (৪০) নামে ওই গৃহবধূকে খুন করে লাশ গুম করার অভিযোগে তার ভাই থানায় মামলা করেছিলেন।

চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা ঘটেছে কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউপির নবগ্রামে।

universel cardiac hospital

আজ মঙ্গলবার গৃহবধূ খতিজা খাতুনকে নোয়াখালী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এ হাজির করা হয়। তিনি ওই গ্রামের মো. দুলালের স্ত্রী।

এদিকে ওই গৃহবধূর ভাই আবুল কাশেমের দায়েরকৃত মামলায় স্বামী দুলাল, বৃদ্ধ শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদসহ ১০ জন গ্রেফতার হয়ে নোয়াখালী জেলা কারাগারে দীর্ঘ ৩-৯ মাস কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্ত হন।

সূত্র জানায়, কোম্পানীগঞ্জের উড়িরচর এলাকা থেকে সোমবার সকাল ১০টায় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বোয়ালখালি নদীর ঘাটে আসেন ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে নিখোঁজ ওই গৃহবধূ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার বোনসহ অপর দুই স্বজন। ঘাটে আসামাত্র স্বামী দুলালসহ অপর আসামিরা গৃহবধূ খতিজাকে দেখে আটক করে কবিরহাট থানায় সোপর্দ করেন।

মঙ্গলবার পুলিশ থানা থেকে গৃহবধূ খতিজাকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে হাজির করে। সেখানে তার ১৬৪ ধারা জবানবন্দি নেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এলাকাবাসী ও থানা সূত্র জানায়, কবিরহাট উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের নবগ্রামের ছায়দল হকের ছেলে দুলাল প্রথম খালেদা আক্তারকে বিয়ে করেন। খালেদা আক্তার অসুস্থ থাকায় ও তার অনুমতি নিয়ে দুলাল একই গ্রামের সামছুল হকের মেয়ে খতিজা খাতুনকে বিয়ে করেন।

বিয়ের পর থেকে গৃহবধূ খতিজার ভাই আবুল কাশেমের সঙ্গে পূর্বশত্রুতার জেরে স্বামী দুলালের সঙ্গে উত্তেজনা চলছিল।

এর জের ধরেই খতিজার স্বামী দুলাল, শ্বশুর-শাশুড়ি, ননদ তাজ নাহার, তাদের স্বজন ছিদ্দিক উল্যাহ, আহসান উল্যাহ, ছিদ্দিক উল্যার ছেলে মো. ফারুক, স্বপন ও দেলোয়ারসহ ১০ জনকে হয়রানি করতে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন কাশেম।

মামলা অভিযোগ করা হয়, গত ২০০৬ সালের জানুয়ারিতে খতিজা খাতুনকে আসামিরা বাড়ি থেকে অপহরণের পর খুন করে লাশ গুম করেছে।

তবে আসামিদের অভিযোগ, মামলার বাদি খতিজার ভাই আবুল কাশেম, তার বোন মারজাহানসহ অপর স্বজরা হয়রানি করতেই ঘটনার দিন রাতে সুবর্ণচর উপজেলায় তাদের স্বজনদের বাড়িতে খতিজাকে নিয়ে যায়।

অপরদিকে থানার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইমতিয়াজ উদ্দিন সরজমিনে তদন্ত না করে অপহৃতা গৃহবধূ খতিজার স্বামীসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। আসামিদের মধ্যে কয়েকজন গ্রেফতার এবং অপর আসামিরা আদালতে হাজির হলে বিচারক তাদের জামিন নামঞ্জুর করে জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

পরে আসামিদের মধ্যে স্বামী দুলাল নয় মাস, তার প্রথম স্ত্রী খালেদা আক্তার সাত মাস, তার বৃদ্ধ বাবা ছায়েদল হক সাত মাস, মা ফুলবানু ছয় মাস, বোন তাজ নাহার ছয় মাস, তাদের স্বজন ছিদ্দিক উল্যাহ সাত মাস, আহসান উল্যাহ চার মাস, ছিদ্দিক উল্যার ছেলে মো. ফারুক পাঁচ মাস, স্বপন তিন মাস ও দেলোয়ার তিন মাস কারাভোগ করে জামিনে মুক্তি পান।

এদিকে গৃহবধূ খতিজা খাতুন আদালতে সাংবাদিকদের জানান, ঘটনার দিন রাতে তার বড় ভাই আবুল কাশেম, শ্যালক নুরুল হক, বোন মারজাহানসহ অপর স্বজনেরা তাকে বাড়ি থেকে নিয়ে সুবর্ণচর উপজেলায় এক স্বজনের বাড়িতে রাখেন। এখান থেকে পরে উড়িরচর এক স্বজনের বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে দেয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে চট্টগ্রাম জেলার চকবাজার এলাকায় স্বজন সামছু মিয়ার বাসায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহকর্মী হিসেবে রাখা হয়। সেখান থেকে মামলার বাদী ভাই আবুল কাশেমের বড় শ্যালিকা ছকিনা খাতুন ও তার স্বামীসহ খতিজাকে উড়িরচর স্বজনের বাড়িতে আনা হয়।

সোমবার সকালে ছকিনা খাতুন ও তার স্বামী নুর হোসেন তাকে নবগ্রাম বাড়িতে আনতে নদী থেকে ট্রলারে করে বোয়ালখালি ঘাটে নিয়ে আসে। সেখানে পূর্ব থেকে ওত পেতে থেকে স্বামী দুলালসহ মামলার আসামিরা তাকে জীবিত অবস্থায় আটক করে থানায় সোপর্দ করে বলে জানান গৃহবধূ খতিজা।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা হাসান গণমাধ্যমকে জানান, গৃহবধূ খতিজাকে ১৪ বছর পর জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। অপহরণ করে লাশ গুমের অভিযোগে খতিজার ভাই আবুল কাশেম বাদী হয়ে ভগ্নিপতিসহ ১০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেছিলেন। মূলত গৃহবধূ খতিজা গাঢাকা দিয়েছিলেন। সোমবার খতিজাকে জীবিত উদ্ধার করে আসামিরা থানায় হাজির করলে পুলিশ তাকে আদালতে পাঠায়। 

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে