গাঁজা ছাড়া গাড়ি চালাতে পারে না সু-প্রভাতের সেই চালক!

বিশেষ প্রতিনিধি

ঘাতক বাস চালক সিরাজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহিত
ঘাতক বাস চালক সিরাজুল ইসলাম। ছবি : সংগৃহিত

রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়া সু-প্রভাত বাসের চালক সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত গাঁজা সেবন করতেন।

জানা গেছে, গাঁজা ছাড়া তিনি গাড়ি চালাতে পারেন না। মূলত গাঁজা খেয়ে ও সারা রাত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই এই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে এসব তথ্য জানিয়েছেন সিরাজুল।

আজ বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী তার ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এরপর আদালত থেকে হাজতে নেয়া হয়। এ সময় মত ও পথের সঙ্গে কথা হয় সিরাজুলের।

মত ও পথকে তিনি বলেন, সারা রাত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলাম। না ঘুমানোর কারণে মাথা ঠিক ছিল না। প্রথমে একটি মেয়েকে গাড়ি চাপা দেই। এর থেকে বাঁচার জন্য আরো দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকি। মনের মধ্যে ভয় কাজ করছিল। একটু দূরে আরেকজনকে (আবরার) গাড়ি চাপা দেই। গাড়ির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে যায়।

সিরাজুল বলেন, শাহাজাদপুর বাঁশতলায় একটি গাড়ি ক্রসিং করতে গিয়ে এক মেয়েকে (সুলতানা মুক্তা) ধাক্কা দেই। এতে সে গুরুতর জখম হয়। তখন আমার মনের মধ্যে ভয় কাজ করতে থাকে। মাথা ঠিক ছিল না। কীভাবে বাঁচতে পারি তার জন্য আরো দ্রুত গাড়ি চালাতে থাকি। আইকন টাওয়ারের সামনে জেব্রা ক্রসিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর (আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী) ওপর আবারও গাড়ি চাপিয়ে দেই। গাড়ির চাকা তার মাথার ওপর দিয়ে যাওয়ায় মাথা থেঁতলে যায়। এরপর ট্রাফিক পুলিশ আমাকে আটক করে।

গুলশান থানার ওসি (অপারেশন) আমিনুল ইসলাম বুধবার বেলা পৌনে ৩টার পর তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারীর আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।

রিমান্ড আবেদনে তিনি বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও মামলার অপর আসামিদের গ্রেফতারের জন্য আসামিকে রিমান্ডে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম মত ও পথকে বলেন, চালক সিরাজুল ইসলাম নিয়মিত গাঁজা সেবন করেন। গাঁজা সেবন ছাড়া তিনি গাড়ি চালাতে পারেন না। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এসব কথা আমাকে জানিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, মূলত গাঁজা খেয়ে ও সারা রাত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালানোর কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন আসামি।

মামলার প্রতিবেদন ২২ এপ্রিল :

যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে চাপা দেয়া সু-প্রভাত বাসের চালক সিরাজুল ইসলামসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারটি গ্রহণ করেছেন আদালত।

বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম দেবদাস চন্দ্র অধিকারী মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ধার্য করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গুলশান থানার আদালতের নিবন্ধন কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রকিব চৌধুরী।

আবরারের মাথার ওপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যান সিরাজুল :

সু-প্রভাত পরিবহনের বাসচাপায় বিইউপি শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহতের ঘটনায় ‘ঘাতক’ বাসের চালক, তার সহকারী ও মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) দিবাগত রাতে নিহত আবরারের বাবা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আরিফ আহম্মেদ চৌধুরী বাদী হয়ে গুলশান থানায় এ মামলা করেছেন। মামলার ধারা পেনাল কোডের ২৭৯/ ৩৩৮ (ক)/৩০৪/ ও ১০৯ । মামলা নং ৩০।

মামলার অভিযোগে বাদী বলেন, বাসটির চালক বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে বাড্ডার দিকে থেকে প্রগতি সরণি রোড দিয়ে কুড়িলের দিকে যাওয়ার পথে গুলশান থানাধীন শাহাজাদপুরের বাঁশতলায় পথচারী সিমথিয়া সুলতানা মুক্তাকে (২০) চাপা দিয়ে রক্তাক্ত জখম করে।

আবারও বেপরোয়াভাবে দ্রুতগতিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গাড়ি চালিয়ে গুলশান থানাধীন নর্দ্দা আইকন টাওয়ারের সামনে প্রগতি সরণির পাকা রাস্তার ওপর জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হওয়ার সময় আমার ছেলে আবরার আহাম্মেদ চৌধুরীকে চাপা দিয়ে বাস তার মাথার ওপর দিয়ে চালিয়ে যায়। ফলে তার মাথা থেঁতলে মগজ বের হয়ে যায়। ঘটনাস্থলে সে মারা যায়।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ৭টার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন প্রগতি সরণি এলাকায় সু-প্রভাত (ঢাকা-মেট্রো-ব-১১-৪১৩৫) বাসের চাপায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী আবরার আহাম্মেদ চৌধুরী নিহত হন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে