অর্থ পাচার রোধে বন্দরে স্ক্যানার স্থাপনের জন্য ‘ওয়ার্কিং কমিটি’র নির্দেশ

ডেস্ক রিপোর্ট

ছবি : সংগৃহিত
ছবি : সংগৃহিত

টাকা পাচার রোধে দেশের সবগুলো বন্দরে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে সরকারের গঠিত মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত ‘ওয়ার্কিং কমিটি’। এর মাধ্যমে সব ধরনের পণ্য পরীক্ষা করতে হবে।

স্ক্যানার স্থাপনের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। সম্প্রতি ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে উল্লিখিত বিষয়টিসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফজলুল হক বলেন, বিদেশে টাকা পাচার রোধে মানি লন্ডারিং আইন সংশোধন করা হয়েছে। আইনের আলোকে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলছে। বিধিমালা চূড়ান্ত করার আগে ভেটিংয়ের জন্য তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। সেখান থেকে কয়েকটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হলে তা দেয়া হয়।

বিধিমালা তৈরির পর অর্থ পাচার রোধ করা সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।

বৈঠকে ওয়ার্কিং কমিটির মহাসচিব মো. রিজওয়ানুল হুদা বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড সংস্থা ‘এপিজি’র আসন্ন বৈঠকে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে বাংলাদেশের অবস্থান মূল্যায়ন করা হবে। বিশেষ করে সংশ্লিষ্ট আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর সংস্কার কার্যক্রমের মূল্যায়ন হবে। ফলে এসব ক্ষেত্রে আমাদের রেটিং উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কাজ করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধসংক্রান্ত ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বলা হয়, আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। টাকা পাচারের বিষয়ে বৈঠকে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন দুদকের প্রতিনিধি। এ সময় ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাচারের বিষয়ে তিনি এনবিআরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমদানি ও রফতানির জন্য ঘোষণা করা সব ধরনের পণ্য যাচাইয়ে সব বন্দরে স্ক্যানার মেশিন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ‘অর্থ পাচার রোধে ওভার ইনভয়েসিং কিংবা অন্য উপায়ে ঘোষণা করা আমদানি-রফতানি পণ্য পরীক্ষার জন্য সব বন্দরে স্ক্যানার মেশিন স্থাপন করে যথাযথ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।’

তথ্য মতে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে চার প্রক্রিয়ায় ৫৯০ কোটি ডলার (দেশীয় মুদ্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা) পাচার হয়েছে। সর্বশেষ প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটির (জিএফআই) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটির মতে, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাঁচ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে- যা দেশের চলতি বছরের (২০১৮-২০১৯) জাতীয় বাজেটের চেয়েও বেশি। প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। টাকা পাচারে বিশ্বের শীর্ষ ৩০ দেশের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের নাম।

জানা গেছে, এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) বার্ষিক বৈঠক আগামী আগস্টে অনুষ্ঠিত হবে। মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন রোধে বাংলাদেশে কি ধরনের কার্যক্রম নেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে ওই বৈঠকে মূল্যায়ন করা হবে। এ জন্য এপিজির কাছে একটি অগ্রগতি প্রতিবেদন বা অ্যাকশন প্ল্যান পাঠাতে হবে। ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করা হয়।

সূত্র জানায়, মানি লন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশের আইনি এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর রেটিং উন্নয়নে এপিজি কিছু সুপারিশ করেছে। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে সরকার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। অ্যাকশন প্ল্যান বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে বলা হয়।

এদিকে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক অ্যান্ড কোম্পানির ক্ষমতা ও আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে কোম্পানি আইন-১৯৯৪-এর সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৈঠকে এর অগ্রগতি জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি মিউচ্যুয়াল ইভালুয়েশনের সুপারিশের আলোকে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়ের অগ্রগতিও জানতে চাওয়া হয়।

আর এসব বিষয়ে আলোচনার জন্য বিএফইইউ এবং রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া এসব বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য বিএফইইউ-এ সরবরাহ করতে মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে