বাঘাইছড়িতে ব্রাশফায়ার আঞ্চলিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ

ডেস্ক রিপোর্ট

রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী গাড়িতে ব্রাশফায়ারের ঘটনাকে আঞ্চলিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, বাঘাইছড়ির ঘটনায় কাউকে এখনো সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তবে তারা মনে করছেন, আঞ্চলিক সমস্যার বহিঃপ্রকাশ এই ঘটনা। আঞ্চলিক অনেক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। তারা ভোট বর্জনও করেছে। সেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের কেউ এটা ঘটাতে পারে বলে তারা ধারণা করছেন। বৃহস্পতিবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম সচিব এসএম আসাদুজ্জামান।

হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, আর্থিক ক্ষতিপূরণে প্রাণহানির ক্ষতিপূরণ হয় না। তবু হামলায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সব দায়দায়িত্ব ইসি নেবে। এ ছাড়া পরিবারের সদস্যদের নির্বাচন কমিশনে সম্ভব হলে চাকরি দেওয়া হবে।

বাঘাইছড়িতে নিরাপত্তাব্যবস্থা যথেষ্ট ছিল কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি নূরুল হুদা বলেন, ‘সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা ছিল। তবে যে চোরাগোপ্তা হামলা ঘটেছে, এত বড় দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের কোথায়, কখন এ–জাতীয় চোরাগোপ্তা হামলা ঘটে, সে বিষয়টি হিসাবের মধ্যে থাকে না। বিষয়টি আন্দাজ করাও একেবারে সম্ভব নয়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘একেবারেই পরিকল্পিতভাবে এক থেকে দেড় মিনিটের মধ্যে এই হামলাটি হয়েছে। ওই বহরে বিজিবির যে নিরাপত্তা বহর ছিল, তাদের পক্ষে ওই সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করা সম্ভব নয়। তবে তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি ছিল বলে মনে করি না। তারা ঘটনার পরপরই তড়িৎ গতিতে ওই এলাকা তল্লাশি করেছে।’ তিনি বলেন, ভোট বর্জনের পর কমিশনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থার কারণে তারা নির্বাচন বানচাল করতে পারেনি। আগেও অনেকে ভোট বর্জন করেছেন। তবে বর্জনের পর এ ধরনের ঘটনা ঘটবে তা বলা যায় না।

কে এম হুদা বলেন, হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতারে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হয়েছে। ঘটনার তদন্তে বিভাগীয় কমিশনারের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। সব বিষয়ে ইসি সার্বিকভাবে যোগাযোগ রাখছে।

প্রসঙ্গত, সোমবার দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচনে দিনভর দায়িত্বপালন শেষে নির্বাচনী সরঞ্জামসহ উপজেলার সাজেকের কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ছেড়ে গাড়িবহর নিয়ে উপজেলা সদরে ফিরছিলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নিরাপত্তাকর্মীদের দল। পথে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার কাছাকাছি বাঘাইছড়ির ৯ কিলোমিটার নামক এলাকায় সড়ক পার হওয়ার সময় নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বহনকারী দুটি জিপগাড়ি লক্ষ্য করে অতর্কিত এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা।

এতে কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ৬ জন। যাদের মধ্যে ছিলেন নির্বাচনী দায়িত্বপালন করা শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারী ও আনসার-ভিডিপি সদস্য। পরে খাগড়াছড়ি থেকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম নেয়ার পথে মারা যান গুলিবিদ্ধ শিক্ষক মো. তৈয়ব। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের সদস্য, আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ স্কুল-কলেজের শিক্ষকসহ ১৭ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার শিজক কলেজের প্রভাষক আবদুল হান্নান আরবসহ অনেকের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে