নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্নের কাছ থেকে ইউরোপীয় নেতাদের সাহস, নেতৃত্ব ও আন্তরিকতা শেখার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।
মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য লেখা একটি নিবন্ধে এরদোগান ক্রাইস্টচার্চে হামলাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেন।
এরদোগান বলেন, একজন রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আমি সবসময় বলে আসছি সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্ম ও জাতি-গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো বিষয় নয়।
ক্রাইস্টচার্চের হামলাকারী খ্রিস্টধর্মকে কলঙ্কিত করতে চেয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন এরদোগান।
ইসলামফোবিয়া নিরসনে পশ্চিমা বিশ্বকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে জানিয়ে তুর্কি প্রেসিড্টে বলেন, এ ভয় দূর করার এখনই উপযুক্ত সময়। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে লড়তে হবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের জন্য লেখা ওই নিবন্ধে এরদোগান নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্নের প্রশংসা করে বলেন, জাসিন্দা আরডার্নের আন্তরিক মনোভাব থেকে ইউরোপীয় নেতাদের শিক্ষাগ্রহণ করা উচিত। নাগরিকদের প্রতি তার সমান দৃষ্টিভঙ্গিকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতেও তা চর্চা করতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় দুটি মসজিদে বন্দুকধারীদের গুলিতে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন।
আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৪৮জন। নিহতদের মধ্যে চার বাংলাদেশিও রয়েছেন।
নিখোঁজ রয়েছেন আরও ৭ বাংলাদেশি। ওই মসজিদে নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পথচারীর খবরে ভাগ্যক্রমে হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। নামাজরত অবস্থায় মুসল্লিদের ওপর শেতাঙ্গ বন্দুকধারীর চালানো স্মরণকালের ইতিহাসে বর্বরোচিত এ হামলার ঘটনায় নিন্দার ঝড় বইছে বিশ্বজুড়ে।
ভয়াবহ এ হামলার পর থেকে নিউজিল্যান্ডের সবধর্মের মানুষ মুসলিম কমিউনিটির পাশে দাঁড়িয়েছেন। মঙ্গলবার দেশটির পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছে কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে।
স্মরণকালের ইতিহাসের বর্বরোচিত হামলায় নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামিতে দেশটির সরকারি বেতার ও টেলিভিশনে জুমার নামাজের আজান সরাসরি সম্প্রচারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
শান্তির দেশে নৃশংস এ হামলার প্রতিবাদে দেশটির সব ধর্মের মানুষ আগামী শুক্রবার হিজাব পরে মুসলিমদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করবে।
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদে মর্মান্তিক সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বারবার গণমাধ্যমের সামনে এসে নিজেই তথ্য জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আরডার্ন।
সংবাদ সম্মেলন থেকে শুরু করে আহতদের দেখতে যাওয়া, তাদের খোঁজখবর নেয়া- সবখানেই নিজে গিয়েছেন। যেখানেই যাচ্ছেন, যার সঙ্গেই কথা বলছেন, সবখানেই তাকে দেখা যাচ্ছে বিমর্ষ অবয়বে।
শোক প্রকাশে শুধু কালো পোশাকই পরেননি, মসজিদে নামাজরত মুসলিমদের হামলার ঘটনায় নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদের প্রতি একাত্মতা প্রকাশে মাথায় ওড়না জড়িয়ে রয়েছেন।
আরডার্নের আচরণ আর চেহারার অভিব্যক্তিতেই বোঝা যাচ্ছে, শোক শুধু তার বক্তব্যে নেই, ভয়াবহ এ হামলার শোক তার মনেও আঘাত হেনেছে।
নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর এমনই কিছু ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যমগুলোতে।এর মধ্যে ওপরের ছবিটি ব্যাপকভাবে শেয়ার হচ্ছে।
ছবিটিগুলোতে দেখা যাচ্ছে, কালো পোশাকের সঙ্গে কালো ওড়না মাথায় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছেন জাসিন্দা। চোখে যেন স্বজন হারানোর করুণ দৃষ্টি। দেখে মনে হচ্ছে হয়তো এক্ষুণি কেঁদে ফেলবেন। কিন্তু হাত দুটো একসঙ্গে শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছেন তিনি, যেন দেশের এই ভয়ানক শোকের দিনে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করছেন।
জাসিন্দা আরডার্ন তার পোশাকের মধ্য দিয়ে দেশের শোকাহত মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ছবিতে তার দাঁড়ানোর ভঙ্গি আর চোখের দৃষ্টিই মনকে নাড়িয়ে দেয়ার মতো। এসব ছবি শেয়ার করে অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী যেন এর মধ্য দিয়ে শুধু নিজের শোক নয়, পুরো দেশের শোককে তুলে ধরেছেন।
সূত্র: জি নিউজ উর্দূ