জুনে আসছে ই-পাসপোর্ট

বিশেষ প্রতিনিধি

ছবি : ইন্টারনেট

কয়েক দফা পেছানোর পর চলতি বছরের জুনে আসছে ই-পাসপোর্ট। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে ২৪ ঘণ্টায় ই-পাসপোর্ট পাবেন নাগরিকরা। এ লক্ষ্যে সব কাজ এগিয়ে চলছে। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর এবং বেনাপোল ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে নির্মাণ করা হচ্ছে ই-গেট। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল পাসপোর্ট সেবা সপ্তাহ উদ্বোধনের সময়ে ই-পাসপোর্ট চালুর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় (২০১৬-২০) ই-পাসপোর্ট প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৭ সালে শেখ হাসিনার জার্মানি সফরের সময় বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট চালুর বিষয়ে জার্মানির সরকারি প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জেএমবিএইচের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এরপর গত বছরের জুলাই মাসে অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান জার্মানির ভেরিডোসের সঙ্গে ই-পাসপোর্টের চুক্তি করেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বর্তমানের বই আকারের পাসপোর্টে সরকারের যে টাকা ব্যয় হয়, সেই অনুপাতে ই-পাসপোর্ট চালু হলে পাসপোর্টপ্রতি সরকারের সাশ্রয় হবে প্রায় ৩ ডলার।

universel cardiac hospital


চুক্তি অনুযায়ী, শুরুতে ২০ লাখ ই-পাসপোর্ট জার্মানি থেকে প্রিন্ট করিয়ে সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আরো ২ কোটি ৮০ লাখ পাসপোর্ট বাংলাদেশে প্রিন্ট করা হবে। সে জন্য উত্তরায় কারখানা স্থাপন করা হবে। পরবর্তী সময়ে ওই কারখানা থেকেই ই-পাসপোর্ট ছাপানো অব্যাহত রাখবে।


সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথম ধাপে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার ও কমার্শিয়াল ইমপর্টেন্ট পারসনদের (সিআইপি) ই-পাসপোর্ট দিয়ে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এই কার্যক্রম উদ্বোধনের কথা ছিল। সর্বসাধারণকে জানুয়ারিতে পাসপোর্ট দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু নানা জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।


চুক্তি অনুযায়ী, পাসপোর্টের ইলেকট্রনিক চিপে দশ আঙুলের ছাপ থাকার কথা। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী জার্মান কোম্পানি মাত্র দুটি আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করতে চাচ্ছে। মাত্র ২ আঙুলের ছাপে ভবিষ্যতে জালিয়াতির আশঙ্কায় জার্মানির প্রস্তাবে রাজি হচ্ছে না পাসপোর্ট অধিদপ্তর। পরে জার্মান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক ও চিঠি চালাচালির পর বিষয়টির সমাধান হয়েছে।
এদিকে ই-পাসপোর্টের মেয়াদ ১০ বছর রাখার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও এখনো এর ফি নির্ধারণ হয়নি। অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য তিন ধরনের ফির পরিমাণ প্রস্তাব করা হয়। সাধারণ পাসপোর্টের জন্য ৬ হাজার (২১ দিন), এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১২ হাজার (৭ দিন) এবং সুপার এক্সপ্রেস ডেলিভারির জন্য ১৫ হাজার টাকা (১ দিন) প্রস্তাব করা হয়। তবে এখনো ফি চূড়ান্ত হয়নি।


ই-পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান জানান, ই-পাসপোর্টের কাজ চলছে। আমরা এ বছরের জুন মাসকে টার্গেট করে কাজ করছি। তবে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট তারিখ বলা যাচ্ছে না। নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ বছরের জন্য ই-পাসপোর্ট পাবে দেশবাসী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের যুগ্ম সচিব (বহিরাগমন-১) মো. মুনিম হাসান বলেন, রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০১৯ সালের জুন মাসে ই-পাসপোর্ট প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে।


সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্টে ৩৮ ধরনের নিরাপত্তা ফিচার থাকবে। এর মধ্যে বর্তমানে এমআরপি ডেটাবেইসে যেসব তথ্য আছে, ই-পাসপোর্টে তা স্থানান্তর করা হবে। ই-পাসপোর্ট চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমআরপি পাসপোর্ট বাতিল হয়ে যাবে না। কারো পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হলে তাকে এমআরপির বদলে ই-পাসপোর্ট নিতে হবে। বর্তমানে বই আকারে যে পাসপোর্ট আছে, ই-পাসপোর্টেরও একই ধরনের বই থাকবে। তবে তা পলিমারের তৈরি একটি কার্ডের চিপে পাসপোর্ট বাহকের তথ্য সংরক্ষিত থাকবে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, ই-পাসপোর্টের সব তথ্য কেন্দ্রীয়ভাবে সংরক্ষিত থাকবে ‘পাবলিক কি ডাইরেক্টরি’তে (পিকেডি)। ই-পাসপোর্টের বাহক কোনো দেশের ভিসার জন্য আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে আবেদনকারীর তথ্যের সঙ্গে পিকেডিতে সংরক্ষিত তথ্য যাচাই করে পাসপোর্ট বইয়ের পাতায় ভিসা স্টিকার কিংবা বাতিল করে সিল দেবে। স্থল ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষও একই পদ্ধতিতে পিকেডিতে ঢুকে ই-পাসপোর্টের তথ্য যাচাই করবে।


সূত্র জানায়, ই-পাসপোর্ট চালুর জন্য দেশের প্রতিটি বিমান ও স্থলবন্দরে চাহিদা মোতাবেক ই-গেট স্থাপন করে স্বয়ংক্রিয় সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা করা হবে। যাদের হাতে ই-পাসপোর্ট থাকবে, তাদের এই গেট দিয়ে সীমান্ত পার হতে হবে।
প্রসঙ্গত, জাপানে নাগরিকদের জন্য প্রথম পাসপোর্ট ইস্যু করা হয় ১৮৬৬ সালে। এরপর ১৮৯৮ সালে চীনে এবং ১৯০০ সালে অটোমান সাম্রাজ্যে পাসপোর্টের প্রচলন শুরু হয়। তবে আন্তর্জাতিকভাবে আধুনিক পাসপোর্টের ধারণা শুরু হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২০ সালে। তখন প্যারিসে অনুষ্ঠিত সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের (লিগ অব ন্যাশনস) বৈঠকে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাতায়াতের ক্ষেত্রে কাগজের তৈরি পাসপোর্ট চালু হয়। ১৯৮০ সালের পর আসে এমআরপির ধারণা। তার আগেই ২০০৮ সাল থেকে উন্নত দেশগুলোতে ই-পাসপোর্ট চালু করে। বর্তমানে বিশ্বের ১১৯টি দেশে ই-পাসপোর্ট চালু হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে