বন্ডের অপব্যবহার : ৫ বছরে ১১১৮ কোটি টাকার পণ্য জব্দ

ডেস্ক রিপোর্ট

ফাইল ছবি

ক্রমবর্ধমান হারে বন্ড সুবিধা নিয়ে আমদানি কিংবা রপ্তানিতে মিথ‌্যা ঘোষণায় অর্থ পাচার কিংবা শুল্ক ফাঁকির পরিমাণ বাড়ছে। শুল্ক গোয়েন্দাসহ বিভিন্ন সংস্থার হাতে বিভিন্ন সময় আটকের ঘটনায় এমন তথ্যপ্রমাণ মিলছে হরহামেশা।

গত পাঁচ বছরে শুধু শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অভিযান ও তদন্তেই বন্ড সুবিধা নিয়ে রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে এক হাজার ১১৮ কোটি ৪৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকার বিভিন্ন পণ্য আটক করা হয়েছে।

যার বিপরীতে ১০৯টি কোম্পানি ৫৭৮ কোটি ৯৪ লাখ ৫৮ হাজার টাকা শুল্ক ফাঁকি দিয়েছে বলে সংস্থাটির তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ফাঁকিকৃত শুল্ক আদায়ে ইতিমধ‌্যে সংস্থাটি শুল্ক আইনে ১০৯টি মামলা দায়ের করে। এর মধ‌্যে ৫০ শতাংশের বেশি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। যেখান থেকে জরিমানা বাবদ শত কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে।

এ বিষয়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, শুল্ক গোয়েন্দা সর্বদা শুল্ক স্টেশনগুলোতে দেশের স্বার্থ সুরক্ষায় শুল্ক ফাঁকি রোধ ও ক্ষতিকর পণ‌্য আমদানি বন্ধে সাফল‌্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। যদিও আমাদের জনবল অত‌্যন্ত সীমিত, তারপরও বলবো অনেক প্রতিকূলতার মধ‌্যেও আমাদের সহকর্মীরা অত‌্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, বন্ড সুবিধা দেওয়া যাতে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো শুণ‌্য শুল্কে কাঁচামাল আমদানি করে ফিনিসড প্রোডাক্ট বিদেশে রপ্তানি করতে পারে। কিন্তু অনেক অসাধু প্রতিষ্ঠান নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে মিথ‌্যা ঘোষণা দিয়ে অতিরিক্ত মুনাফার আশায় বেশি বা ভিন্ন পণ‌্য নিয়ে আসে। তাদের জন‌্য আমার বক্তব‌্য থাকবে শুল্ক গোয়েন্দা ওই সকল প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অত‌্যন্ত কঠোর পদক্ষেপ নেবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় হবে না। কারণ, সবার আগে দেশের স্বার্থ।

শুল্ক গোয়েন্দার এক পরিসংখ‌্যানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সংস্থাটির বিভিন্ন সময় অভিযানে ১০৯টি কোম্পানির বিভিন্ন পণ‌্য জব্দ করা হয়েছে।

এর মধ‌্যে গার্মেন্টস সংশ্লিষ্ট ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ‌্য আটক করা হয়। যার পরিমাণ প্রায় ১৪৫ কোটি ৫৪ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। আটককৃত পণ‌্যের মধ‌্যে রয়েছে মিথ‌্যা ঘোষণায় ফেব্রিক্স ও এক্সসরিজ, নীট ফেব্রিক্স, কাপড়ে ব‌্যবহৃত বিভিন্ন রং, বেড সীট, নীটেড ফেব্রিক্স ও সোয়েটার জাতীয় বিভিন্ন পণ‌্য।

যেখানে ফাঁকি হয়েছে প্রায় ১৩৩ কোটি ২৮ লাখ ৯ হাজার টাকার রাজস্ব। এছাড়া রয়েছে প্লাস্টিক জাতীয় বিভিন্ন পণ‌্যের কাঁচামাল, ডুপ্লেক্স বোর্ড, কপি পেপার ইত‌্যাদি পণ‌্যের চালান।

শুল্ক গোয়েন্দা আরো জানায়, এসব পণ‌্য আটকের পাশাপাশি সংস্থাটি কাস্টমস আইনে ১০৯টি মামলা দায়ের করেছে। যেখানে জরিমানাসহ কয়েকশ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ পর্যন্ত ৫০ শতাংশের বেশি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। অন‌্যান‌্য মামলা নিষ্পত্তির পর্যায়ে রয়েছে।

তবে এইসব কোম্পানির বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে কোনো ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়নি। শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ এক্ষেত্রে দাবি করেছে যেখানে অর্থপাচারের বিষয়টি পাওয়া গেছে সেখানে মানিলন্ডারিং আইনে ব‌্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে পৃথক নথিখুলে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

শু্‌ল্ক গোয়েন্দা তদন্তে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত তথ্য যাচাইয়ে গত ছয় মাসে ২৬৪টি প্রতিষ্ঠানের হিসাবে গরমিল পাওয়া গেছে।

এর মধ‌্যে মিশওয়ার হোসিয়ারী মিলস প্রা: লিমিটেড, আসিয়ানা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, অ্যাপারেল অপশনস প্রা: লিমিটেড, ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেড, ডি কে অ্যাপারেলস লিমিটেড, ক্যাপরী অ্যাপারেলস লিমিটেড, সাদ ফ্যাশস ওয়্যার লিমিটেড, লিলাক ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড ও নাব ফ্যাশন লিমিটেডসহ ১১ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এফওসির (ফ্রি অব কস্ট) ক্ষেত্রে প্রাপ্যতার চেয়ে অতিরিক্ত পারিমাণ পণ্য আমদানি ও জাল বা ভূয়া এফওসি দলিলের মাধ্যমে শত কোটি টাকার বেশি পণ্য আমদানির প্রমাণ মিলেছে। যাদের বিরুদ্ধে মামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। ইতিমধ‌্যে কয়েকটি মামলা দায়ের হয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে