বিমান ছিনতাই চেষ্টার বর্ণনা দিলেন পাইলট-ক্রুসহ ছয়জন

ডেস্ক রিপোর্ট

বিমান ছিনতাইকারী পলাশ। ফাইল ছবি
বিমান ছিনতাইকারী পলাশ। ফাইল ছবি

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খী ছিনতাই চেষ্টা ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন পাইলট-কেবিন ক্রুসহ ছয়জন।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, পলাশ আহমেদ আসন পরিবর্তন করলে তাকে নিষেধ করেন একজন কেবিন ক্রু। আর তাতেই পলাশ ক্ষিপ্ত হয়ে সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করেন। তবে কেবিন ক্রুরা তার মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করেছিলেন। শুক্রবার এ তথ্য জানা যায়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে বুধবার সন্ধ্যায় বিস্তারিত বর্ণনা দেন উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর পাইলট গোলাম শফী, ফার্স্ট অফিসার মুনতাসির মাহবুব এবং কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম, হোসনে আরা, শরিফা বেগম ও আবদুস শুকুর মোজাহিদ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের পরিদর্শক রাজেশ বড়ুয়া গণমাধ্যকে বলেন, ঘটনার দিন উড়োজাহাজটিতে সাতজন পাইলট-কেবিন ক্রু ছিলেন। এর মধ্যে পাইলটসহ ছয়জন তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। বাকি রয়েছেন শাহেদুজ্জামান সাগর নামে আরেক কেবিন ক্রু। সেদিন তাকে জিম্মি করার খবরও পাওয়া গিয়েছিল। সাগরকে আরও কয়েকদিন পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি আরও বলেন, পাইলট-কেবিন ক্রুরা বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এর আগে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ম্যানেজার উইং কমান্ডার এবিএম সরওয়ার-ই-জামান এবং ঘটনার সময় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে দায়িত্বরত দুই কর্মকর্তাসহ বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চিত্রনায়িকা সিমলাকে শিগগিরই চট্টগ্রামে ডাকা হবে। ছিনতাই চেষ্টাকারী যুবক পলাশ চিত্রনায়িকা সিমলার স্বামী ছিলেন। ঘটনার সময় কমান্ডো অভিযানে পলাশ প্রথমে আহত ও পরে মারা যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় জিজ্ঞাসাবাদে বিমানের পাইলট-ক্রুরা জানিয়েছেন পলাশ আসন পরিবর্তন করলে তাকে নিষেধ করেন একজন কেবিন ক্রু। আর তাতেই ক্ষিপ্ত হয়ে পলাশ সঙ্গে থাকা পিস্তল বের করেন। এ সময় তিনি কয়েক দফা বিমানে অস্থিরভাবে পায়চারী করেন। তিনি পাইলটের সঙ্গে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেন। তবে কেবিন ক্রুরা তার মনোযোগ অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা করেন। কেবিন ক্রু শফিকা নাসিম একটি গোপন কোড ব্যবহার করে বিষয়টি পাইলটকে জানিয়ে দেন। পাইলট ও ফার্স্ট অফিসার লাইভ স্ক্রিন অন করে সেখানে পলাশের গতিবিধি দেখতে পান।

পাইলট-ক্রুরা বলেন, পরে ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চান পলাশ। ওই দাবি নিয়েই এক হাতে পিস্তল এবং আরেক হাতে বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু নিয়ে অসংলগ্ন আচরণ শুরু করেন তিনি। যাত্রীদের রক্ষায় পাইলট ও ক্রুরা নানাভাবে কালক্ষেপণের কৌশল নেন। এরপর উড়োজাহাজটি জরুরি অবতরণ করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে। নিরাপদে নামিয়ে আনা হয় যাত্রী ও বিমানকর্মীদের।

২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় উড়োজাহাজ ময়ূরপঙ্খীর ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। বিকালে ঢাকা থেকে ছাড়ার পর পলাশ উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টা চালান। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিমানটি চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করে। এরপর কমান্ডো অভিযানে পলাশ নিহত হন। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলায়। চিত্রনায়িকা সিমলার সঙ্গে ৩ মাস আগে পলাশের বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়।

এ ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় মামলা করে। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটকে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে