হাতিরঝিল থেকে উত্তরায় স্থানান্তর হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন

অর্থনীতি ডেস্ক

হাতিরঝিল থেকে উত্তরায় স্থানান্তর হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন। ছবি : সংগৃহিত
হাতিরঝিল থেকে উত্তরায় স্থানান্তর হচ্ছে বিজিএমইএ ভবন। ছবি : সংগৃহিত

দেশের পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন তৈরি পোশাক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) উত্তরার নতুন ভবন আগামী ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করার সম্মতি দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিজিএমইএর নতুন অফিসের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে বিদায় নিচ্ছে বহুল আলোচিত বিজিএমইএ ভবন। দীর্ঘ আট বছর মামলা লড়ে পরাজিত হয়ে এবং কয়েক দফা সময় নিয়ে শেষ পর্যন্ত অফিসটি সরিয়ে নিতে হচ্ছে তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির নেতাদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে আগামী ৩ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এই ভবনের উদ্বোধন করবেন।

জানা যায়, দুই টাওয়ারসমৃদ্ধ নতুন বহুতল ভবনে যাচ্ছে বিজিএমইএ। এপ্রিল মাসেই রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে উত্তরায় নতুন ভবনে স্থানান্তর করা হবে তাদের কার্যক্রম। একই মাসের ১২ তারিখের মধ্যে বর্তমান ভবন ছেড়ে দেওয়া হবে—এই মর্মে সংগঠনটির পক্ষে আদালতের কাছে মুচলেকা দেওয়া আছে।

সম্প্রতি উত্তরায় নির্মাণকৃত নতুন ভবনে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনটির কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এরই মধ্যে  বেইসমেন্টসহ ভবনের চারতলার কাজ শেষের দিকে। ৪০ হাজার বর্গফুটের প্রদর্শনী হলসহ ১৩ তলা ভবনটি তৈরি হচ্ছে রাজধানীর উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরে। লেকসাইট ভিউয়ের সাড়ে পাঁচ বিঘা জমির ওপর নির্মিত হচ্ছে ভবনটি।

এর আগে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের হাতিরঝিলের ভবনকে ‘ক্যান্সার’ আখ্যা দিয়েছেন আদালত। ভেঙে ফেলতে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন কয়েকবার। তবে পোশাকশিল্পের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে আদালত বারবার সময় বাড়িয়েছেন। সর্বশেষ মুচলেকা দিয়ে এক বছরের সময় নেয় বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ, যা শেষ হবে আগামী ১২ এপ্রিল।

আদালতের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তাঁরা হাতিরঝিলের এই ভবন ছেড়ে উত্তরার নতুন ভবনে যাচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি জানান, এরই মধ্যে উত্তরার নতুন ভবনের চারতলার কাজ শেষ হয়েছে। যাতায়াতের সড়ক খুব ভালো না হওয়ায় তাঁরা জরুরি উদ্যোগ নিয়ে রাস্তা ঠিক করার পরিকল্পনাও নিয়েছেন। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

বিজিএমইএ সহসভাপতি মোহাম্মদ নাসির বলেন, ‘১২ এপ্রিলের আগেই বিজিএমইএ উত্তরায় নতুন ভবনে যাচ্ছে। ভবনে বড় আকারের অডিটরিয়াম, এক্সিবিশন সেন্টার, শোরুম থাকছে। ভবনটির তিন দিক থেকে যাতায়াতের সুুবিধা থাকছে।’ বিজিএমইএর কার্যালয় স্থানান্তর করা হলে ভবন ভেঙে ফেলা হবে কি না এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিজিএমইএ এই ভবন ছেড়ে দেওয়ার পর এটি সরকারের সম্পত্তি হবে। তখন সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কী করা হবে। তবে আইনের প্রতি সম্মান রেখে আদালতের দেওয়া নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই বিজিএমইএ কার্যক্রম স্থানান্তর করা হবে নতুন ভবনে।’

বিজিএমইএ ভবন নিয়ে আদালতে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ১২ এপ্রিলের মধ্যে এই ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এই ভবন নিজ দায়িত্বে ভেঙে ফেলার নির্দেশ রয়েছে আদালতের। আর যদি তারা নিজ দায়িত্বে না ভাঙে, তাহলে রাজউককে এই ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া আছে। এই ভবন ভাঙতে রাজউকের কার্যক্রমের সব খরচ বহন করতে হবে বিজিএমইএকে।’

উল্লেখ্য , ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট ওই ভবনকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করে বিজিএমইএ। শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ২ জুন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বিভাগ এ আপিলের আবেদন খারিজ করে রায় দেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে