হঠাৎ করেই ভারত সীমান্তে সৈন্য মোতায়েন করেছে চীন। গতকাল দেশটি তার দ্য পিপলস লিবারেশন আর্মির (পিএলএ) সদস্যদের মোতায়েন করে।
সিন্ধু প্রদেশের থার অঞ্চলে এই সৈন্য মোতায়েন নিয়ে ভারতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। তারাও সীমান্তে বিএসএফের উপস্থিতি বাড়িয়েছে।
চীন যেখানে সৈন্য মোতায়েন করেছে, সেটি ভারত ও পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সীমানা থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে বলে খবর দিয়েছে রাশিয়ান বার্তাসংস্থা স্পুটিনিক।
ভারতীয় টিভি জি নিউজকে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেছেন, ভারত সীমান্ত ঘেঁষে চীনের সৈন্যদের অবস্থান দেখেছেন তারা।
পরে ওই সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী বিএসএফের সদস্য বাড়ানো হয়। একইসঙ্গে বিষয়টি তারা কূটনৈতিকভাবে চীনেরও নজরে আনে।
ভারতীয় সেনা গোয়েন্দা কর্মকর্তার ভাষ্যে, সিন্ধু ও বেলুচিস্তানে পাকিস্তানের সঙ্গে চীনের যৌথ প্রকল্প রয়েছে। সেটির দেখভাল করে চীনের পিএলএ। আমরা মনে করছি, সেখানেই বাড়তি সেনা মোতায়েন করেছে চীন।
চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডর (সিপিইসি) নামে কোটি কোটি ডলারের এই প্রকল্প বর্তমানে নির্মাণাধীন। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যে, ৪৬ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প শেষ করতে শেষমেষ ৬২ বিলিয়ন ডলার লেগে যেতে পারে।
৩ হাজার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে থাকা এই করিডরের নিরাপত্তায় পাকিস্তান সেখানে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৭ হাজার সদস্য সার্বক্ষণিকভাবে মোতায়েন রেখেছে।
এরই মধ্যে গতবছরের শেষদিকে চীন সফরে গিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাউজা বেইজিংয়ের কাছে এই প্রকেল্পের আরও নিরাপত্তা জোরদারে সহায়তা চেয়েছিলেন।
স্থানীয়রা এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে। সেখানকার এই অস্থিতিশীল পরিবেশ নিয়ে আগেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে চীন এবং প্রকল্পটি তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কথাও জানিয়েছে।
প্রকল্পের নিরাপত্তার স্বার্থেই জাতিসংঘে উঠা পাকিস্তানের লস্করই-তৈয়বার নেতা মাসুদ আজহারকে নিষিদ্ধের প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছিল চীন।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক এক কর্মকর্তা হঠাৎ করেই ভারত সীমান্তে সেনা মোতায়েনকে ওই প্রকল্পের নিরাপত্তা জোরদার হিসেবেই বর্ণনা করেছেন।
তবে সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী হামলায় ৪২ ভারতীয় আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হন। হামলার পাল্টা হিসেবে ভারত পাকিস্তান ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। এরপর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
সে প্রেক্ষাপটে ভারতের মাধ্যমে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘনে এই উপমহাদেশের রাজনৈতিক হিসাব পাল্টে দিতে পারে বলে মনে করছে বেইজিং। এজন্য অবশ্য তারা বরাবরের মতো ইসলামাবাদকেই সমর্থন দিয়ে আসছে।
মেজর জেনারেল (অব.) হার্সা কাকর স্পুটিনিককে বলেন, ভারত সীমান্তে চীনের এই সৈন্য মোতায়েনকে দাফতরিকভাবে মনে হয়েছে— সিপিইসিতে কর্মরত নিজ দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা এবং স্থানীয় বিক্ষুব্ধ মানুষ থেকে প্রকল্পকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু, বেসরকারিভাবে দেখলে, পাকিস্তান ভূখণ্ডে চীনের সেনাঘাঁটি গাড়ার শুরুটা হলো।
তিনি বলেন, এর বাইরে আরেকটি বিষয়ও গুরুত্বপূর্ণ। কোনোভাবেই ভারত যাতে পাকিস্তানের ওপর সামরিকভাবে চড়াও হতে না পারে, চীন সেটি নিশ্চিত হতে চাইছে। যদিও ভারত কখনও পাকিস্তান ভূখণ্ডের এত গভীরে গিয়ে হামলা করবে না।
কিন্তু, দীর্ঘমেয়াদে এমন হতে পারে, পিএলএ সৈন্যরা আমাদের সীমান্তের আরও কাছাকাছি চলে এসেছে। চূড়ান্তভাবে তখন চীন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়বে। সুতরাং কোনো সচেতন জাতিকেই এমন সৈন্য মোতায়েনের অধিকার দেয়া উচিত নয়- যোগ করেন হার্সা কাকর।
তিনি আরও বলেন, বাস্তবতা হলো, চীন দীর্ঘমেয়াদে পাকিস্তানে সেনাঘাঁটি গড়ায় চোখ দিয়েছে। নিজের স্বার্থ না দেখে দেশটির উন্নয়নে তারা কখনই বিনিয়োগ করবে না। কিন্তু চীনের সেনা ও বিমানঘাঁটি নিশ্চিতভাবেই ভারতের বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে দেখা দেবে।