মিয়ানমারের আইন, বাণিজ্য, জনসংযোগ মন্ত্রণালয়সহ ব্যাংকের বহু সাইট বাংলাদেশের হ্যাকাররা ডাউন করে দেয়। শুধু ওয়েবসাইট নয়, মিয়ানমারের ২০টি ফেসবুক গ্রুপ, আক্রমণকারী হ্যাকারদের ৩০টি ফেসবুক আইডি ডিজেবল করে দিয়েছে বাংলাদেশের হ্যাকাররা।
বাংলাদেশের সাইবার আক্রমণের ভয়ে মিয়ানমার কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (এমএমসিইআরটি) দেশটির ওয়েবসাইটে সাইবার হামলার বিষয়ে ফেসবুক পেজে জরুরি সতর্ক বার্তা দিয়েছে।
জরুরি সতর্ক বার্তায় বলা হয়েছে, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে সাইবার উত্তেজনা বৃদ্ধির পর ২৫ মার্চ থেকে মিয়ানমারের ওয়েবসাইটগুলোতে আবার সাইবার আক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে।
ওই পোস্টে এমএমসিইআরটি মুখপাত্র মায়ো মিন্ট হাইটি বলেন, ডিডিওএস এবং ডিফেসমেন্ট ছাড়াও ওয়েব হোস্টিং সার্ভারে আক্রমণ ঘটেছে। আক্রমণকারী ওয়েব হোস্টিং সার্ভারে আক্রমণ সার্ভার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তারা কিছু তথ্য পেতে পারে। আমরা চিন্তিত যে তারা ব্যবহারকারীদের তথ্য জব্দ করতে পারে। ওয়েবসাইটগুলোতে সংবেদনশীল তথ্য না থাকলে ব্যবহারকারীর পরিচয় হারিয়ে যেতে পারে। তাই আমরা আরেকটি সতর্কবাণী জারি করছি।
এতে আরও বলা হয়েছে, ১৯ মার্চ থেকে সাইবার আক্রমণ শুরু হয়েছে। এটি চলমান রয়েছে। এতে সাইবার ৭১ এবং Da4k Bomb3r দেখা যাচ্ছে।
এতে বলা হয় ব্যবহারকারীদের ব্যাকআপের জন্য আলাদা তথ্যভাণ্ডার সংযুক্ত করতে। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, হামলাকারীরা আক্রমণের পরে লগইন করে পরিচয় পরিবর্তন করতে পারে। ওয়েবসাইট এবং মেইলগুলোতে এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করার দরকার নেই যা সহজেই অনুমান করা যায়।
তিনি বলেন, ১৯ মার্চ সাইবার ৭১ মিয়ানমারের ১০টি ওবেয়সাইটে হামলা চালিয়েছে। ২১ মার্চ একটি ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়েছে, ২২ মার্চ একটি ওয়েবসাইট এবং ২৩ মার্চ ৬৪টি ওয়েবসাইটে হামলা চালিয়েছে।
সাইবার আক্রমণ তীব্র হতে পারে আমরা নজরে রাখছি বলে জানিয়েছে মিয়ানমার আন্ডারগ্রাউন্ড হ্যাকার ইউনিয়ন (ইউজিএমএইচ)।
মিয়ানমার কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম (এমএমসিইআরটি) বলছে, সাইবার ৭১ মিয়ানমারের ডিডিএএস এবং ডিফেসমেন্টে আক্রমণের লক্ষ্য ছিল।
প্রসঙ্গত ১৫ মার্চ থেকে মিয়ানমারের হ্যাকাররা বাংলাদেশের সরকারি-বেসরকারি অন্তত ৫৫টি ওয়েবসাইট হ্যাক করে তাদের পতাকা ঝুলিয়ে দেয়। তার প্রতিবাদে ১৯ মার্চ থেকে বাংলাদেশের সাইবার৭১, ডন্স টিম-ডিটিসহ অন্যান্য বাংলাদেশি হ্যাকার কমিউনিটি সম্মিলিতভাবে ‘OP Myanmar’-এর মাধ্যমে মিয়ানমার সাইবার স্পেসে পাল্টা আক্রমণ শুরু করে।
হামলায় মিয়ানমারের আইন, বাণিজ্য, জনসংযোগ মন্ত্রণালয়সহ ব্যাংকের বহু সাইট বাংলাদেশের হ্যাকাররা ডাউন করে দেয়। শুধু ওয়েবসাইট নয়, মিয়ানমারের ২০টি ফেসবুক গ্রুপ, আক্রমণকারী হ্যাকারদের ৩০টি ফেসবুক আইডি ডিজেবল করে দিয়েছে বাংলাদেশের হ্যাকাররা। হ্যাক করা গ্রুপগুলোর নাম পরিবর্তন করে লেখা হয়েছে ‘Hacked By Bangladesh’ এবং গ্রুপগুলোর কাভার পেজে হ্যাকারদের বাণী ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে।
এ হামলায় যারা বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছেন ভার্চুয়াল জগতে তাদের নাম হ্যাক্সর আহমেদ, ডন, সিরিও, দ্য বস।
হামলার বিষয়ে ডন্স টিম-ডিটির বিভাগীয় প্রধান এইচ আর সোহাগ গণমাধ্যমকে বলেন, মিয়ানমারের সাইবার স্পেস বলতে তেমন কিছুই নেই। যে কয়টা সাইট আছে তার সবগুলোই প্রায় বাংলাদেশসহ অন্যান্য অনেক দেশেই ব্যান করে রেখেছে। এর বাইরেও যেসব ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানে আমরা যৌথভাবে ধারাবাহিক আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশকে উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রোপাগান্ডার জন্য মিয়ানমার হ্যাকারদের ফেসবুক প্রোফাইল ফেসবুক থেকে সরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে করেছে ডন্স টিম ডিটির ম্যাশ অ্যাটাক। যার পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। মিয়ানমারের ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে এই মিশন অব্যাহত রাখব আমরা। শুধু মিয়ানমার নয়, বাংলাদেশের সাইবার স্পেসে আক্রমণ করলে যে কোনো দেশের পরিণতি ভয়াবহ হবে।
বাংলাদেশি হ্যাকার টিম সাইবার ৭১-এর প্রধান তানজিম আল ফাহিম বলেন, বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ হওয়ার পথে অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু সাইবার নিরাপত্তায় তুলনামূলকভাবে এখনো আমরা অনেক পিছিয়ে।
তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তা না থাকলে আমাদের স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেকটা তলাহীন ঝুড়ির মতোই। আগে নিজ দায়িত্বে আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোর নিরাপত্তা যাচাই করে সমাধান করে দিতাম। কিন্তু বর্তমানে আইনি জটিলতায় আমাদের পক্ষে এটাও করা সম্ভব নয়।
ফাহিম বলেন, কোনো প্রকার সহযোগিতা ছাড়াই বাংলাদেশি হ্যাকাররা তাদের দক্ষতার বিচারে ইতিমধ্যেই বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে। সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে ডিজিটাল বাংলাদেশের সাইবার নিরাপত্তা আমাদের দেশের হ্যাকাররাই নিশ্চিত করতে পারবে। হতে পারবে দেশের সাইবার যোদ্ধা।