বছরখানেক আগে ইয়াজউদ্দিন আল বাজ কাজ রেখে বিক্ষোভে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন নিজেদের বসতবাড়িতে ফিরে যাওয়ার অধিকার দাবিতে ইসরাইলি সীমান্তে হাজার হাজার ফিলিস্তিনি জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন।
গত বছরের ৩০ মার্চের ওই বিক্ষোভে যোগ দিয়ে ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলিতে প্রাণ হারাতে বসেছিলেন ২৯ বছর বয়সী যুবক আল বাজ ।
তিনি বলেন, সীমান্ত বেড়া থেকে ২ মিটার দূরে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। বিক্ষোভের দেড় ঘণ্টায় মাথায় ইসরাইলি স্নাইপারদের গুলি এসে তার পা এফোঁড়-ওফোঁড় করে বেরিয়ে গেছে।-খবর এএফপির
পরে পাঁচটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে তাঁর পায়ে। এ ছাড়া সংক্রমণ তো রয়েছেই। পায়ের হাড়ের বড় একটি অংশ খুইয়েছেন।
এর পর একটি লোহার খাঁচায় তার পা বেঁধে রাখা হয়। কাজেই আগের মতো তিনি আর কখনও হাঁটতে পারবেন না।
চিকিৎসকদের দাতব্য সংস্থা মেডিকেল উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছেন এই ফিলিস্তিনি যুবক। তিনি জানান, গত এক বছর ধরে আমি যন্ত্রণায় ভুগছি। ব্যথা এখনও কমেনি।
‘রাতে একেবারেই ঘুমাতে পারি না। এমনটি ঘটবে জানলে আমি কাজ ছেড়ে আসতাম না।’
সীমান্তে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার বছর পার হওয়ার আগেই ইহুদি সেনাদের গুলিতে দুই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কিন্তু এসবের বাইরে আরও কয়েক হাজার আহত হয়েছেন। যাদের কথা সবাই ভুলে গেছেন।
এসবের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা ধুঁকছে। শত শত ফিলিস্তিনি সংক্রমণ কিংবা অঙ্গচ্ছেদের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ফিলিস্তিনের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চাইলে সেই সুযোগও তাদের দিচ্ছে না ইসরাইল।
কাজেই গাজার স্বাস্থ্যসেবার সংকটে কয়েক হাজার অস্ত্রোপচার নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে অনেক বিলম্বে করতে হচ্ছে। এ ছাড়া আতঙ্কে চিকিৎসকরা উপত্যকাটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে শুরু করেছেন।
গাজা বিক্ষোভের বছরপূর্তিতে শনিবার বড় ধরনের কর্মসূচি রয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান গেরাল্ড রকেনচাব বলেন, উত্তেজনা ফের চরমে পৌঁছালে সেখানে স্বাস্থ্যসেবার অবনতি আরও বাড়বে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, অবরোধের কারণে গাজার অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। সেখান ১০ জন কর্মক্ষমের মধ্যে সাতজনই বেকার।
ইসরাইলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে এ বিক্ষোভ শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু ইহুদি সেনারা তাজা গুলি ছোড়ে নিরীহ মানুষকে হত্যা করছেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছে।
বিক্ষোভকারীরা কোনো হুমকি হিসেবে দেখা না দিলেও ইসরাইলি সেনারা তাদের গুলি করে হত্যা করছেন। এমএসএফ ক্লিনিকে কয়েক ডজন আহতকে চিকিৎসার অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা গেছে।
সংস্থাটি এখন পর্যন্ত গুলিতে আহত চার হাজার ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসা দিয়েছে। এর মধ্যে অল্প কয়েকজন অঙ্গচ্ছেদের ঝুঁকির বাইরে রয়েছেন।
মৎস্যজীবী মোহাম্মদ বাকর গত বছর গুলিতে আহত হয়েছিলেন। ২৭ বছর বয়সী এ যুবকের এ পর্যন্ত পাঁচটি অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তিনি বলেন, এর পর আমার আর কোনো ভবিষ্যৎ থাকল না।
অভিযোগ করে তিনি বলেন, তারা কোনো উসকানি না দিলেও ইসরাইলি সেনারা তাদের গুলি করেছে। আমি আর আগের মতো কাজ করতে পারব না। আমার পা কোনো ভার বহন করতে পারে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, রোগীর সংখ্যার তুলনায় গাজার চিকিৎসাসেবা অপ্রতুল। অর্ধসহস্র আহত যুবক গাজার বাইরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে আবেদন করেছেন। কিন্তু তাদের এক শতাংশেরও কম লোককে সেই সুযোগ দেয়া হয়।
২০১৮ সালের পর বহু চিকিৎসক গাজা ছেড়ে চলে গেছেন। তবে তাদের আসল সংখ্যা এখনও জানা যায়নি।