ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ মাস ধরে ছাত্রলীগের কার্যক্রম নেই। এতে হতাশা ও ক্ষোভে ছাত্র রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছেন অনেক সম্ভাবনাময়ী ছাত্রনেতা। ঝিমিয়ে পড়েছেন অধিকাংশ নেতাকর্মী। কার্যক্রম না থাকায় সংগঠনটির সর্বত্র স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
জানা যায়, গত বছরের ২৮ অক্টোবর বিভিন্ন অনিয়ম-অভিযোগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেন। এরপরই ঝিমিয়ে পড়ে সরকার দলীয় এ ছাত্র সংগঠনটির কার্যক্রম।
এদিকে স্থগিতাদেশ দেয়ার সময় কেন্দ্র অভিযোগ তদন্তে তখন তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইন বিষয়ক সম্পাদক আল নাহিয়ান খান জয়।
তিনি বলেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই গত নভেম্বরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। বাকিটা কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শাকিল ভূইয়া ও জাহাঙ্গীর মঞ্জিল পিপাস।
তবে গুরুতর কিছু অভিযোগ তুললেও ঘটনাস্থল ক্যাম্পাসে না এসেই তারা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেন। যেটা নিয়ে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, তদন্ত কমিটিকে শাখার নেতারা বারবার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তারা ক্যাম্পাসে আসেননি। তারা অদৃশ্য কারো ইঙ্গিতে হাওয়াই রিপোর্ট তৈরি করে জমা দিয়েছেন। যা আজও আলোর মুখ দেখেনি।
অবশ্য মৌখিকভাবে কার্যক্রম চালানোর বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম।
তবে গত পাঁচ মাসে ভর্তি পরীক্ষার তিন দিন কিছু দৃশ্যমান কার্যক্রম চালালেও এরপর থেকেই স্থবিরতা দেখা যায় কার্যক্রমে। গত তিনটি জাতীয় দিবসে ফুল দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব কোনোমতে টিকিয়ে রেখেছেন তারা।
অপরদিকে দলীয় টেন্টে থেকে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়া এ ক্যাম্পাসের ছাত্র সংগঠনগুলোর একটি ঐতিহ্য। কিন্তু গত পাঁচ মাসে দলীয় টেন্টেও নেতাকর্মীদের কোনো উপস্থিতি না থাকায় সংগঠনটির অবস্থান ও সক্ষমতা নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় কমিটি এই কমিটিকেই কার্যক্রম চালানোর পুনঃআদেশ দেবে নাকি নতুন কমিটি অনুমোদন দেবে এ নিয়েও সংশয়ে রয়েছে পদপ্রত্যাশী নেতারা। তবে বসে নেই নেতা-কর্মীরা। তারা অনেকে এই কমিটি ফেরানো আবার অনেকে নতুন কমিটির জন্য পক্ষে বিপক্ষে জোর লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রে।
ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, দীর্ঘদিন কার্যক্রম স্থগিত থাকায় কর্মীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। অতিদ্রুত নতুন নেতৃত্ব আশা করি কেন্দ্রের কাছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, ছাত্রলীগের বর্তমান বিশ্বিবদ্যালয় কমিটি ২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল অনুমোদন দেয় ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। কমিটি অনুমোদনের পর তারা কিছু দৃশ্যমান শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারা, টেন্ডারবাজি, শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ ওঠে। কেন্দ্রীয় কমিটি এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয় বলে জানা গেছে।
তবে বিশ্বিবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিমের দাবি, কেন্দ্র যেসব অভিযোগের ভিত্তিতে কার্যক্রম স্থগিত করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। এসব অভিযোগের স্বপক্ষে তারা একটিও প্রমাণ দেখাতে পারবে না।
নতুন কমিটিতে পদপ্রত্যাশী তন্ময় সাহা টনি বলেন, এভাবে কার্যক্রম স্থগিত অবস্থায় ছাত্রলীগ চলতে পারে না। সমস্যার আশু সমাধান চাই।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহসম্পাদক ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত বলেন, কার্যক্রম একেবারে বন্ধ নয়। কর্মীদের চাঙ্গা রাখতে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তবে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে সকল সমস্যার অবসান ঘটবে বলে আশা করি।
ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান লালন বলেন, বর্তমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ। তাছাড়া কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। তাই নতুন কমিটি এখন সময়ের দাবি।