ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স-এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক আবদুল মান্নান জানান ,নগরীর ৯৫ শতাংশ হাসপাতালে অগ্নিনির্বাপণ প্রস্তুতি নেই। বাকি ৫ শতাংশ কোন রকম প্রস্তুতি রাখলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ভারী শিল্প হতে শুরু করে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ভবনসমূহের অবস্থা আরো খারাপ।
তিনি বলেন, সিডিএ ইমারত নির্মাণ আইনানুযায়ী কোন কোন ভবন মালিক ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নেয়। ওই ছাড়পত্রে ফায়ার সার্ভিস থেকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও শর্তা দেয়া হয়। কিন্তু কেউই মানে না।
ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশ না মানলে ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষমতা ফায়ার সার্ভিসের নেই বলে উল্লেখ করেন এই কর্মকর্তা।
তবে, সিইপিজেড এবং কেইপিজেড এর কারণে শহরের অন্তত গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস। এসব কারখানায় আগুন লাগলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি না পৌঁছানো পর্যন্ত তারা আগুনের সাথে যুদ্ধ করতে পারবে।
এদিকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পুরোপুরি বিল্ডিং কোড মেনে নির্মাণ করা ভবন নেই বললেই চলে। নগরীর সরকারি ভবনগুলোতে কিছুটা বিল্ডিং কোড মানার চেষ্টা করা হলেও, ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন ভবনগুলোতে তা মানা হয় না বললেই চলে।
২০০৭ সালে সিডিএ’র পরিদর্শকরা শহরের প্রায় হাজার দশেক ভবন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দেন। ওইসব প্রতিবেদনে শতভাগ বিল্ডিং কোড মানা হয়েছে এমন একটি ভবনও পাওয়া যায়নি। তখন বেশকিছু ভবনের অননুমোদিত অংশ অপসারণে অভিযান চালায় সিডিএ। কিন্তু পরবর্তীতে সিডিএ’র এই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
তবে, বন্দর নগরীতে বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডভিত্তিক সিডিএ’র ইমারত পরিদর্শক রয়েছেন। তাঁদের নজর এড়িয়ে কোন স্থাপনা নির্মাণ করা সম্ভব নয়। তবুও ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে অনিয়ম হলেও রহস্যজনক কারণে তারা সেখানে বাধা দেন না।
বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বর্তমানে যেসব আবাসিক এলাকা রয়েছে তার মধ্যে সরকারি উদ্যোগে নির্মিত আবাসিকগুলিতেই ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশ করার মত সড়ক আছে। বাকি অধিকাংশ আবাসিকে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারবে না।
এছাড়া খাতুনগঞ্জ, রিয়াজুদ্দিন বাজারসহ বেশকিছু বাজার আছে যেখানে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের কোনো গাড়িই প্রবেশ করতে পারবে না। ঘিঞ্জি পরিবেশে ক্রেতারা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে এসব মার্কেটে কেনাকাটা করেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম মনে করেন, যেকোন ভবন মালিকের উচিৎ তাঁর নিজে স্বার্থেই বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ করা। মানলে সবাই ঝুঁকিমুক্ত থাকবে। না মানলে তা নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারার মতোই হবে।
তিনি বলেন, ২০০৮ সালে সরকার উপলব্ধি করেছে বিল্ডিং কোড না মানার ক্ষেত্রে সিডিএ’র একার পক্ষে দায়িত্ব পালন করা কঠিন। সিডিএ’কে সহযোগিতা করার জন্য ভবনের নকশায় স্বাক্ষরকারী স্থপতি এবং প্রকৌশলীকে ইমারত নির্মাণ আইনে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ভবনটি কাজ শুরু করা থেকে শেষ পর্যন্ত কোন ডেভিয়েশন হচ্ছে কিনা, মানসম্পন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা সবকিছু দেখা। কোন ব্যত্যয় ঘটলে তার দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। আইনেই তাদের এই দায়িত্ব বা ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।
তবুও সিডিএ কখনো দায় এড়াতে পারে না উল্লেখ করে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, বিল্ডিং কোড মানতে বাধ্য করার জন্য সিডিএ কাজ করে যাচ্ছে। সিডিএ’র ১৮টি আবাসিক এলাকায় ভবন নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড না মানলে ফ্ল্যাট হস্তান্তর প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা হয়।
তিনি বলেন, আইন আছে, বিধিমালা আছে। কিন্তু সবার আগে ভবন মালিকদের সচেতন হতে হবে। সচেতন হতে হবে সাধারণ মানুষকে। তবেই সবাই ঝুঁকিমুক্ত হবে।