উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ সংক্রান্ত ভাষণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নির্বাচনী আচরণবিধি ভাঙেননি বলে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার সীমাবদ্ধতা নিয়েই প্রশ্ন তুললেন সিপিআই(এম)’র সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। শনিবার এক চিঠিতে ভারতের লোকসভা ভোটের অন্যতম প্রার্থী মোদীর এই ভাষণটিকে আচরণবিধির বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে বিবেচনার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরাকে অনুরোধ করেছেন ইয়েচুরি।
ইয়েচুরি তাঁর চিঠিতে লিখেছেন, আমার পূর্ববর্তী চিঠির জবাবে শুক্রবার ভারতের নির্বাচন কমিশনের তরফে আমাকে জানানো হয়েছে যে, ‘মোদীর ভাষণে সরকারি মাধ্যমের অপব্যবহার সংক্রান্ত নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ হয়নি।’ কিন্তু আমি জানাতে চাই, আমার অভিযোগের সঙ্কীর্ণ ব্যাখ্যা করেই এই জবাব দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ‘সরকারি মাধ্যমের অপব্যবহার’ সংক্রান্ত বিষয়েই কমিশনের নজর আবদ্ধ থেকেছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সমস্ত জাতীয় রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভাষণ বা বিবৃতিগুলিকে একই বিবেচনায় দেখার জন্য সরকারি মাধ্যমকে নির্দেশ দিতে আমি কমিশনকে অনুরোধ করছি। কারণ, আলোচ্য ভাষণটিকে সরকারি মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ হিসাবেই বিবেচনা করেছে। কিন্তু আমার অভিযোগের বৃহত্তর দিকটি হলো, চলতি নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নিজে একজন প্রার্থী। কিন্তু আমাদের বিজ্ঞানীদের একটি সাফল্যের বার্তা নির্বাচনী প্রচারে কাজে লাগাতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে ব্যবহার করেছেন তিনি। নির্বাচনী লক্ষ্যপূরণে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মারাত্মক অপব্যবহার হিসাবেই গণ্য হয় তাঁর এই কাজ। আলোচ্য ভাষণের পরপরই প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে দাবি করেছেন যে, তিনি শুধু স্থল বা আকাশের নয়, মহাকাশেরও চৌকিদার। প্রধানমন্ত্রী এবং বিজেপি’র অন্যান্য নেতারা এই বলে প্রচারে সক্রিয় হয়ে ওঠেন যে, এই সরকার যে সাহস দেখালো, তা আগের কোনও সরকার দেখাতে পারেনি। ভোটে সুবিধা পেতে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের মারাত্মক অপব্যবহার ছাড়া এসবের আর কি-ই বা অর্থ হতে পারে? সাধারণত ডিআরডিও’র অধিকর্তার মতো সংশ্লিষ্ট সংস্থার শীর্ষ আধিকারিকরাই এই ধরনের ঘোষণা করে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে এই ঘোষণার জন্য প্রধানমন্ত্রী যেভাবে নিজেকেই বেছে নিলেন, তা নিশ্চিতভাবেই নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সঙ্কীর্ণ দলীয় স্বার্থেই প্রধানমন্ত্রীর অফিসের এহেন গুরুতর অপব্যবহার করা হয়েছে। এই সমস্ত দিক ভালোভাবে বিবেচনায় আনার জন্য নির্বাচন কমিশনকে অনুরোধ জানিয়েছেন ইয়েচুরি। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছেন, সংবিধানের ৩২৪ধারা অনুযায়ী সমস্ত প্রতিদ্বন্দ্বীর সমান সুযোগ নিশ্চিত করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্ব রয়েছে কমিশনের। ভারতীয় গণতন্ত্রের স্বাস্থ্যের স্বার্থে তাঁর উত্থাপিত বিষয়গুলি নির্বাচন কমিশন আন্তরিকভাবে বিবেচনা করবে বলেও চিঠিতে আশা প্রকাশ করেছেন সীতারাম ইয়েচুরি।