ভারতের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী প্রথমবারের মতো একইসঙ্গে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন।
এর মধ্যে অমেঠিতে আগেই তিনি লড়েছেন। এটি তাদের পারিবারিক আসন। এবার রাহুল কেরলের ওয়ানাড আসনেও প্রার্থী হবেন বলে রোববার সকালে জানিয়েছেন তার দল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা একে অ্যান্টনি।
রাহুল গান্ধীর মা ও ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রগেসিভ অ্যালায়েন্স) সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ১৯৯৯ সালে এই আসনে বিজয়ী হন। এরপর তিনি টানা দু’বার এমপি ছিলেন। এরপর সোনিয়া গন্ধী ছেলে রাহুলের জন্য এই আসন ছেড়ে দিয়ে প্রার্থী হন কর্নাটকের রায়বরেলীতে।
কংগ্রেসের দীর্ঘদিনের দুর্ভেদ্য ঘাঁটিই বলা হয় উত্তরপ্রদেশের অমেঠিকে। গান্ধী পরিবারের দুই প্রজন্মের চার প্রার্থী এখান থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছেন। ১৯৯৮ সালে একবার মাত্র বিজেপি প্রার্থী এখান থেকে জিতলেও এখনও পর্যন্ত নেহরু গান্ধী পরিবারের কেউ এখানে হারেননি।
১৯৮০ সালে এই আসনে ভোটে জিতে প্রথম এমপি হন নেহরু গান্ধী পরিবারের সদস্য সঞ্জয় গান্ধী। ওই বছর বিমান দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হলে, পরের বছর উপ-নির্বাচনে বিজয়ী হন তার দাদা রাজীব গান্ধী। ১৯৯১ সালে নিহত হওয়ার আগে পর্যন্ত তিনি টানা এমপি নির্বাচতি হন।
১৯৮০ সালে রাহুলের দাদি ইন্ধিরা গান্ধী রায়বেরলী এবং মেদক থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। যেটি এখন তেলেঙ্গনা রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত হয়েছে।
সর্বশেষ ২০১৪ সালেও অমেঠিতে কংগ্রেস থেকে বিজয়ী হন রাহুল গান্ধী। তিনি বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী স্মৃতি ইরানিকে প্রায় ১ লাখ ৮ হাজার ভোটে পরাজিত করেন।
এবারও এই অমেঠিতে কংগ্রেসের প্রার্থী রাহুল। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির সেই স্মৃতি ইরানি। দুটি আসনে রাহুলের প্রার্থিতা ঘোষণার তিনি কড়া সমালোচনা করেছেন।
টুইটে খোঁচা দিয়ে স্মৃতি ইরানি লিখেছেন, অমেঠিতে পরাজয়ের ভয়েই রাহুল ওয়ানাডে প্রার্থী হয়েছেন।
তবে, বিজেপি নেতার এই মন্তব্যকে কংগ্রেস ‘অপরিণত’ ও ‘শিশুসূলভ’ বলে উল্লেখ করেছে।
কংগ্রেস সূত্রে দাবি, বেশ কিছুদিন ধরেই দক্ষিণের কংগ্রেস নেতারা দাবি করে আসছিলেন, রাহুল দক্ষিণের একটি কেন্দ্রে প্রার্থী হোন। তাতে গোটা দক্ষিণাঞ্চলে দলের কর্মীদের মনোবল বাড়বে।
সেই দাবিতে প্রায় এক সপ্তাহ আগেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হল আসনের নাম।
একে অ্যান্টনির ঘোষণার পর কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, কেরল, কর্নাটক এবং তামিলনাড়ু তিন রাজ্য থেকেই কংগ্রেস সভাপতিকে প্রার্থী করতে চেয়ে আর্জি জানিয়েছিলেন দলের নেতারা। শেষ পর্যন্ত ওয়ানাড কেন্দ্রকেই বেছে নেয়া হয়েছে।
কেরলের ক্ষমতাসীন বামেরা অবশ্য রাহুলের প্রার্থী হওয়াকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন বলেছেন, উনি কেরলের ২০টির মধ্যে একটি আসনে লড়বেন, সেটা আমাদের কাছে আলাদা কোনো বিষয় নয়। আমরা লড়াই করব। তবে, রাহুলের এমন কোনো আসনে প্রার্থী হওয়া উচিত ছিল, যেখানে বিজেপি লড়ছে।
উল্লেখ্য, এপ্রিল এবং মে মাসজুড়েই কয়েকটি ধাপে ভারতে লোকসভার ৫৪৩ আসনে ভোটগ্রহণ করা হবে। তবে ওয়ানাডে ভোট হবে ২৩ এপ্রিল। আর অমেঠির ভোটগ্রহণ করা হবে ৬ মে। এরপর ২৩ মে থেকে ভোট গণনা শুরু হবে।