বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে করণীয়…

জীবন যাপন ডেস্ক

বজ্রপাত
বজ্রপাত। ফাইল ছবি

বৈশ্বিক উষ্ণতা বজ্রপাতের কম্পাঙ্ক লক্ষণযোগ্য হারে বৃদ্ধি করায় আমাদের দেশেও চলতি মৌসুমে বজ্রপাতের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। অবশ্য প্রতিবছরই বজ্রপাতে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করা হলো-

১. বজ্রপাতের পূর্ব-মুহূর্তের লক্ষণ

বজ্রপাত হওয়ার পূর্ব-মুহূর্তে কয়েকটি লক্ষণে এটি কোথায় পড়বে তা বোঝা যেতে পারে। যেমন বিদ্যুতের প্রভাবে আপনার চুল খাড়া হয়ে যাবে, ত্বক শিরশির করবে বা বিদ্যুৎ অনুভূত হবে।

এ সময় আশপাশের ধাতব পদার্থ কাঁপতে পারে। অনেকেই এ পরিস্থিতিতে ‘ক্রি ক্রি’ শব্দ পাওয়ার কথা জানান। আপনি যদি এমন পরিস্থিতি অনুভব করতে পারেন তাহলে বজ্রপাত হবে এমন প্রস্তুতি নিন।

২. উঁচু গাছপালা ও বিদ্যুৎ লাইন থেকে দূরে থাকা

কোথাও বজ্রপাত হলে উঁচু গাছপালা বা বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। তাই এসব স্থানে আশ্রয় নেয়া যাবে না। যেমন- খোলা স্থানে বিচ্ছিন্ন একটি যাত্রী ছাউনি, তালগাছ বা বড় গাছ ইত্যাদি।

৩. খোলা বা উঁচু স্থান থেকে দূরে থাকা

ঘন ঘন বজ্রপাত হতে থাকলে কোনো অবস্থাতেই খোলা বা উঁচু স্থানে থাকা যাবে না। পাকা দালানের নিচে আশ্রয় নেয়াই সুরক্ষার কাজ হবে।

৪. জানালা থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় ঘরের জানালার কাছাকাছি থাকা যাবে না। জানালা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতর থাকতে হবে।

৫. বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা

বজ্রপাতের সময় বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত সব যন্ত্রপাতি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। টিভি, ফ্রিজ ইত্যাদি বন্ধ করা থাকলেও ধরা যাবে না। বজ্রপাতের আভাষ পেলে প্লাগ খুলে বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করতে হবে। অব্যবহৃত যন্ত্রপাতির প্লাগ আগেই খুলে রাখতে হবে।

৬. ধাতব বস্তু স্পর্শ না করা

বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করা যাবে না। এমনকি ল্যান্ড লাইন টেলিফোনও স্পর্শ করা যাবে না।

৭. উঁচু স্থান থেকে নিজেকে সরাতে হবে

এমন কোনো স্থানে যাওয়া যাবে না- যেখানে নিজেই ভৌগোলিক সীমার সবকিছুর উপরে। মানে আপনিই সবচেয়ে উঁচু। এ সময় ধানক্ষেত বা বড় মাঠে থাকলে তাড়াতাড়ি নিচু হয়ে যেতে হবে। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু কোনো স্থানে থাকলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে যেতে হবে।

৮. নিচু হয়ে বসা

যদি বজ্রপাত হওয়ার উপক্রম হয় তাহলে কানে আঙুল দিয়ে নিচু হয়ে বসে চোখ বন্ধ রাখতে হবে। কিন্তু এ সময় মাটিয়ে শুয়ে পড়া যাবে না। মাটিতে শুয়ে পড়লে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বাড়বে।

৯. পরস্পর দূরে থাকতে হবে

বজ্রপাতে সময় কয়েকজন জড়ো হওয়া অবস্থায় থাকা যাবে না। ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যেতে হবে। কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যাওয়া যেতে পারে।

১০. পানি থেকে দূরে থাকা

বজ্রপাতের সময় নদী, জলাশয় বা জলাবদ্ধ স্থান থেকে সরে যেতে হবে। পানি বিদ্যুৎ পরিবাহী তাই সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।

১১. রবারের বুট পরিধান

বজ্রপাতের সময় চামড়ার ভেজা জুতা বা খালি পায়ে থাকা খুবই বিপজ্জনক। এ সময় বিদ্যুৎ অপরিবাহী রাবারের জুতা সবচেয়ে নিরাপদ।

১২. গাড়ির ভেতর থাকলে

বজ্রপাতের সময় গাড়ির ভেতরে থাকলে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নেয়া যে পারে। গাড়ির ভেতরের ধাতব বস্তু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

১৩. বাড়ি সুরক্ষিত করতে হবে

বজ্রপাত থেকে বাড়িকে নিরাপদ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এজন্য বাড়িতে আর্থিং সংযুক্ত রড স্থাপন করতে হবে। তবে ভুলভাবে স্থাপিত রড বজ্রপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই এক্ষেত্রে দক্ষ ইঞ্জিনিয়ারের পরামর্শ নিতে হবে।

১৪. বজ্রপাতে আহত হলে

বজ্রপাতে আহত কাউকে বৈদ্যুতিক শকে আহতদের মতোই চিকিৎসা দিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসককে ডাকতে হবে। হাসপাতালে নিতে হবে।

একই সঙ্গে আহত ব্যক্তির শ্বাস-প্রশ্বাস ও হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। তবে এ বিষয়ে প্রাথমিক প্রশিক্ষণ জরুরি। যা সবারই জেনে নেয়া প্রয়োজন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে