মীর রবি’র নতুন বইয়ের কবিতা

সাহিত্য ডেস্ক


কাল পরিক্রমায় থেমে নেই বাংলা ভাষা ও সাহিত্য, থেমে নেই বাংলা কবিতার যাত্রাও। কবিতার নিরীক্ষা ও প্রচল ভাঙার মিছিলে শামিল হয়েছেন এই সময়ের অনেক কবিই। তাদের মাঝে যে ক’জন তরুণ কবির কবিতা ইতোমধ্যে কবিতা বোদ্ধাদের দৃষ্টি কেরেছে তাদের মধ্যে অন্যতম- পাঠকদের আলোচনায় উঠে আসা এই সময়ের তরুণ কবি মীর রবি । কবিতার প্রকরণ, ব্যাকরণ ও প্রাঞ্জলতার পাশাপাশি সামঞ্জস্য মিথের শব্দগভীর ব্যবহারে কবি হয়ে উঠেছেন প্রিয় সব কবিতার জনক। একুশে বইমেলায় প্রকাশিত তার ইরেজারে আঁকা ব্ল্যাক মিউজিক কবিতার বই থেকে প্রকাশ করা হল নির্বাচিত ক’টি কবিতা।

দ্য হলি স্টরি

universel cardiac hospital

প্রার্থনার ভঙ্গিতে গুটিয়ে রাখি হাত; শহরতলির জঞ্জালে জমে সভ্যতার মল। দুর্গন্ধের দায়বোধে জাগে রাবার বন। ঝড়ো-বৃষ্টিতে রাবার ঝরে, টোকাইয়ের রঙিন চোখে গড়িয়ে চলে রাবার বল। আনত সিজদায় ভাতের আরাধনা শেষে গলধঃকরণ করি- পৃথিবীর গোলক। ক্ষুধামগ্ন পেটে সেচ কর্মসূচি, কাবিখার হরিলুটে প্রভুদের আস্থা, নামকীর্তনে খাবো নিরামিষ। ততদিনে শুদ্ধি আনো জীবন, আপাতত রামাদানুল মোবারক- উপবাস-উপসনা- হলি স্ট্রেতে…

ইটস হেভিলি রেইনিং

ওকে না করা যায়নি- বৃষ্টি ভিজেছিলো। শিলাপাতে চুমো এঁকে গাল- সৌষ্ঠব ঠোঁটে জমেছিল রূপবান তরুণের ঘ্রাণ। মাতাল হাওয়ায় এলোকেশী চুল ঢেকে দিয়ে- পিঠ-বুক, স্ব-গৌরবে ভাসছিলো নাভিমূল, জল চুয়ে ক্রমাগত- জল হাঁটছিলো, ছুটছিলো পিলপিল নবাগত হাত। পর্যাপ্ত রমণের ইচ্ছে নিয়ে কিশোরবেলা রঙ্গনের রোদে নামে- পিচ্ছিল পথ, সে পথ পেরোয়নি কেউ। সমূহ অঙ্গে টাকিমাছের সন্ধানে একদল মাছুয়া- ডুবুরি অবয়বে তুলেছিলো সুখ, ঠুকরে নিয়ে গেছে সব- পানকৌড়ি। ওড়ার অভিজ্ঞতা জানা না থাকায় ফেরানো যায়নি তাকে।

অতঃপর- বিরতিহীন অনুভূতি পড়েছিলো- এখানে-সেখানে, উঠানে-বারান্দায়- জল গড়াগড়ি ঝুম বরষায়। দৃষ্টিহীন তাকিয়ে ছিলো কদমফুল- কেয়াদের বনে ভেসে গিয়েছিলো নিঃসঙ্গ বাঁশপাতার নৌকো। জমা ছিলো ডেকে আপন আলিঙ্গন, একান্ত আদিম কিছু স্পর্শ- স্পর্শ নয়, স্পন্দন- দক্ষ সাঁতারুর শ্বাস- প্রশ্বাসে দাগিয়ে যাওয়া মন। শরীর চুয়ে পড়া বৃষ্টি-  মুছে দিয়ো গোপন চাহনি- দাগ বা ক্ষত পুড়িয়ে ক্রমাগত, বিজলির ধমকে ভস্ম কর মেঘ- জলে ভাসি সমুদ্র সঙ্গমে

মৃতদের দেশে

আমাদের শহরে কোনো শোভাযাত্রা নাই, নাই কোনো আনন্দ মিছিল। বর্ষবরণ ভুলে গেছি রক্তজমাট ক্যালেন্ডারে। দিন রাত, চলে যায়- শুধু গুলির আওয়াজ, দ্রিম-দ্রিম বাজে অসুরে ড্রাম। হারানো কাস্তের দিনে নিড়িয়ে নিই দুঃখের আগাছা। জমিনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বেওয়ারিশ ফসল। এইসব ফসলে চলে মৃত্যুকালিন ভোজ- এখানে এখন শোকের মিছিল, গার্মেন্টসগুলো নিদ্রাহীন-বুনে যায় মৃতদের কাফন

অজ্ঞাত

জমিয়ে রাখা ঠোঙায় কতিপয় ভোরের শিশির- হাসনাহেনার গন্ধ শুঁকে উঠে আসে সমূহ সাপের ম্যুরাল। ওক ফলের স্বাদ নিতে উড়ে যায়- নাম না জানা পাখি, যাকে প্যাঁপিউ বার্ড বলতে পারি। অথচ- কেউ জানতো না সেখানে আমিও ছিলাম, আমার গন্ধে সরে যাচ্ছিলো মাটি, জেগে উঠছিলো জমজম কুয়ো- যার ভেতর প্রচণ্ড- তৃষ্ণা নিয়ে ডুবে গেছি। কেউ শুনতে পারেনি কোনো আরব্য রাজহাঁসের চিৎকার- যে আমাকেই যমদূত ভেবে পালিয়েছে আরব সাগরের দিকে…

সিল্কসিটি এক্সপ্রেস

কয়লার ধোঁয়া ছেড়ে যে ট্রেন সিল্কসিটি ছুটছিলো- তার কাঠগোলাপের কামরায় মুখোমুখি- কোনো এক ইংরেজ রমণী- পিছু ফেলে সব, নীলাভ চোখে তার ঘুরছিলো পৃথিবী। বাদমওয়ালা ভুলে যাচ্ছিলো বাদামের গল্প- ভরাট খোসায় জমা রাখা বাদামের সংসার, ফেরিওয়ালা যাচ্ছিল ভুলে- চুড়ি-ফিতের দরদাম… তরুণ ছেলেটা লজ্জায় লাল হচ্ছিল বারবার, প্রেমিকার ঠোঁট উঁকি দিচ্ছিলো মনগোরায়, টিনেজার বুক কাঁপছিলো- জিপারের ভাঁজ ভুলে প্যান্ট ফুলে ওঠার ভয়। অথচ- কোনো লজ্জা নেই, দ্বিধা নেই- সন্তানের দুগ্ধপানে, স্তন মেলে চুষেছিলো শিশু- অমৃত অস্বাদনে। সমস্ত বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে ছিলো সমূহ পুরুষ- ধর্ষণমুখর চোখ-

একজন বাদামওয়ালার
ফেরি করা লোকটার
ভার্সিটির তরুণ ছাত্রের
এমনকি একজন কবির-

তাবত শিশ্নশাস্ত্র যেনো ট্রেনের মতোই সমান্তরালে ফুঁসে উঠেছিল পুরুষাঙ্গের মখমলে…

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে