প্রশ্নফাঁস ছাড়াই এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
সোমবার সকালে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন তিনি।
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এবং মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এবার আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৫৫০ জন, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৭৮ হাজার ৪৫১ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬৫ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। মোট কেন্দ্র সংখ্যা ২ হাজার ৫৮০টি।
সূচি অনুযায়ী, ১ এপ্রিল থেকে ১১ মে হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ১২ থেকে ২১ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করতে হবে। সকালের পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ও বিকেলের পরীক্ষা ২টা থেকে ৫টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আশাকরি এবারের এসএসসি পরীক্ষার মতো এইচএসসিও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে, প্রশ্ন ফাঁসহীনভাবে, নকলমুক্ত হবে। ভালোভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করতে পারবো। এজন্য অভিভাবক, শিক্ষক ও গণমাধ্যমের সর্বাত্মক সহযোগিতা চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা নিয়ে বা প্রশ্নপত্র নিয়ে অনেক রকমের রিপোর্ট হয়। একেকটি পরীক্ষায় হাজার হাজার প্রশ্নপত্র করতে হয়। এত ধরনের প্রশ্নপত্র হয়, সেগুলো ছাপানো ও এগুলোর জন্য কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। যিনি প্রশ্ন করেন, যিনি প্রশ্ন মডারেট করেন, ছাপা হওয়ার পরে এটি আর কেউ দেখেন না, বোর্ডের কেউ দেখেন না, মন্ত্রণালয়ের কেউ দেখেন না, এ বিষয়গুলো আসলে জনগণের আসলে সেভাবে জানা নেই।
তিনি বলেন, এই পরীক্ষাটি যে সারা দেশে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ সেটিও আমরা অনেক সময় হয়তো তেমনভাবে অ্যাপ্রিশিয়েট করি না বা করতে পারি না। আশাকরি সবার সহযোগিতায় যত বিশাল কর্মযজ্ঞই হোক, সবার যদি সেখানে সহযেগিতা থাকে তাহলে সেই কঠিন কাজও সহজ হয়ে যায়।
পরীক্ষার আগে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছাড়ানো প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো অত্যন্ত সক্রিয়, তারা তীক্ষ্ণ নজরদারি করছেন, যেমনটা এসএসসিতে করেছিলেন। কেউ যদি এ ধরনের অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত থাকে, গুজব ছড়ানো, প্রতারণা করা, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
দীপু মনি, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীদের প্রতি, শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানাবো, কোনো রকম গুজবে কান দেবেন না। কোনো ধরনের প্রতারণার ফাঁদে পা দেবেন না। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি প্রশ্নপত্র ইনশাল্লাহ ফাঁস হবে না এবং প্রশ্নপত্র ফাঁসমুক্তভাবে, সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন হবে।
চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন সেট নিয়ে সমস্যার মতো পুনরাবৃত্তি রোধে করণীয় প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমস্যা হয়েছিল। পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা নেয়া হয়েছিল। আশা করছি এবার কোনো সমস্যা হবে না। আর কোথাও যদি কোনো সমস্যা হয় সেটি কীভাবে কাটিয়ে উঠতে পারবো সে ব্যাপারে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্রে ক্রটি নিয়ে শিক্ষাবোর্ডে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দিয়েছে, সেটি দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। উত্তরপত্র মূল্যায়ন—পদ্ধতি রয়েছে, এ ধরনের যখন কোনো সমস্যা তৈরি হয় তার জন্য খাতা দেখার সেট পদ্ধতি আছে, সেটি অনুসরণ করা হবে।
কোচিং সেন্টার নিয়ে মন্ত্রী বলেন, ১ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত কোচিং সেন্টারগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি বিভিন্ন কারণেই রাখা হয়েছে, বিভিন্ন রকমের কোচিং আছে, যেহেতু এগুলোকে এখন আলাদা করতে পারছি না। কিছু অসাধুচক্র নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও নানা রকমের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে যায়, সেজন্য সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছি।
তিনি বলেন, আমি আশা করছি প্রতিটি জেলা-উপজেলা সর্বত্র প্রশাসন, পুলিশ মনিটরিং করবেন এবং এগুলো সত্যি সত্যি বন্ধ থাকছে সে বিষয়টি তারা নিশ্চিত করবেন।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা থাকবে না, এমন কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- প্রশ্নে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সেটি নিয়ে কাজ করছেন, তারা সেটিকে বাস্তবায়ন করবে।
তিনি বলেন, শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করবো, তবে একবারে সবকিছু করা সম্ভব হবে না, পর্যায়ক্রমে আমরা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করবো।