রাজধানীতে জনবহুল স্থানে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার স্থাপনের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছিলেন মোহাম্মদ হানিফ ওরফে হানিফ বাংলাদেশি। তাঁর সেই আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিল অনেক ব্যক্তি-সংগঠন। নাগরিকদের গণদাবিতে সাড়া দিয়ে ঢাকা সিটি করপোরেশন পরে রাজধানীতে পর্যাপ্ত গণশৌচাগার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে।
সেই হানিফ (৩৮) এবার জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন নির্দলীয় দলনিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে ‘টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া’ পর্যন্ত ১ হাজার ৪ কিলোমিটার একক পদযাত্রায় বের হয়েছেন। তিনি ১৪ মার্চ কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার জিরো পয়েন্ট থেকে পদযাত্রা শুরু করেন। ১৯ দিনের মাথায় ৬৭০ কিলোমিটার পথ হেঁটে হানিফ গতকাল সোমবার বগুড়ায় এসে পৌঁছেছেন।
বিকেল পাঁচটার দিকে বগুড়ায় পৌঁছার পর স্থায়ীভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল এবং জনগণের ভোটাধিকার ফিরে পাওয়ার দাবিসংবলিত প্রচারপত্র সাধারণ মানুষদের মধ্যে বিলি করেন। হানিফ ১০ এপ্রিল তেঁতুলিয়ায় পৌঁছাবেন বলে আশা করছেন।
ভোটাধিকার ও সুশাসনে জাতীয় ঐক্যের সদস্য হানিফ বলেন, ‘সাড়ে সাত কোটি বাঙালির ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার কারণেই ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্ত, বহু মা-বোনের সম্ভ্রম আর মুক্তিযুদ্ধে লড়াই–সংগ্রামের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি। মুক্তিযুদ্ধের আগে ভিনদেশের শাসকগোষ্ঠীর দ্বারা বাঙালি শাসিত ও শোষিত হয়েছে। এখন স্বাধীনতার পরে দেশীয় লুটেরাদের দ্বারা শোষিত ও ভোটাধিকার বঞ্চিত হচ্ছি। যে সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, সেই সরকারই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে।’
হানিফ দাবি করেন, ‘ভোটের প্রতি জনগণের আর কোনো আস্থা নেই। নির্বাচনে নেই কোনো উৎসবমুখর পরিবেশ। নির্বাচনব্যবস্থা এখন প্রশ্নবিদ্ধ। ভোটের প্রতি জনগণের হারানো আস্থা ফেরাতে হলে এবং জনগণকে ভোটকেন্দ্রমুখী করতে হলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য স্থায়ীভাবে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে নির্বিঘ্ন ভোটের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারলে জনগণও আবার ভোটকেন্দ্রে ফিরবে। এ কারণে জনগণের ভোটাধিকার, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় সকল নির্বাচনে জনগণ যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টির দাবিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া একক পদযাত্রা শুরু করেছি।’
হানিফ আরও বলেন, তাঁর বাড়ি নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার নিয়াজপুর ইউনিয়নের জাহানাবাদ গ্রামে। নোয়াখালীর বুলুয়া ডিগ্রি কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর চট্টগ্রাম ওমর গনি এমএস কলেজে স্নাতকে ভর্তি হন। এরপর পড়াশোনা ছেড়ে তিনি সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায় জড়ান। ২০১৬ সালে ড. কামাল হোসেন ও আ ব ম মোস্তফা আমিনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার যুব শাখার আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে আ ব ম মোস্তফা আমিনের নেতৃত্বাধীন ফরোয়ার্ড পার্টির জাতীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে রয়েছেন।
৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে দেশের জন্য। ৪৭ বছর পরেও জনগণ নিজের ভোট দিতে পারছে না। স্বাধীন রাষ্ট্রে নির্বাচনের নামে এভাবে প্রহসন চলতে পারে না। জণগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ নির্বিঘ্নে যেন ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছি
একক পদযাত্রার কারণ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ হানিফ বলেন, ‘রাজধানীতে গণশৌচাগার স্থাপন আন্দোলনে মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া পেয়েছিলাম। এরপর অনাকাঙ্ক্ষিত মানবভ্রূণ হত্যা বন্ধের দাবিতে আন্দোলনেও মানুষকে সচেতন করেছিলাম। বিগত জাতীয় নির্বাচনে সুবর্ণচরে গৃহবধূ ধর্ষণের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছিলাম। ৩০ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। সাধারণ মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। নির্বাচনের নামে রাষ্ট্রের টাকা অপচয় করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে জনগণ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। ভোটাররা মনে করে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিক না দিক, সরকারদলীয় প্রার্থীরাই বিজয়ী হবেন। ভোট সর্বজনীন উৎসব। সেই উৎসব এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে দেশের জন্য। ৪৭ বছর পরেও জনগণ নিজের ভোট দিতে পারছে না। স্বাধীন রাষ্ট্রে নির্বাচনের নামে এভাবে প্রহসন চলতে পারে না। জণগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়াসহ নির্বিঘ্নে যেন ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্যই টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত এই পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করছি।’