ভারতের লোকসভা নির্বাচন দোড়গোড়ায়। পশ্চিমবঙ্গে এবার পাখির চোখ করেছে বিজেপি। গত লোকসভা নির্বাচনে গোটা দেশে বিজেপি ঝড় উঠলেও মোদি-হাওয়া থমকে গিয়েছিল মমতার রাজ্যে। মাত্র দুটি আসন নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল গেরুয়া বাহিনীকে।
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, এবার কিন্তু লড়াই অতটা সহজ নয় তৃণমূল কংগ্রেসের জন্য। দেখে নেওয়া যাক কী কী আশঙ্কা কাজ করছে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে।
১. ২০১১ সালের পরিবর্তনের পরে পরেই ছিল ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যে বিপুল হাওয়া ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষে। এবার সেটা অনেকটাই কম।
২. ২০১১ থেকে ২০১৯। আট বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের বিরুদ্ধে স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে। সরকারি সুযোগ পাওয়া ও না-পাওয়া নিয়ে দলের মধ্যেই ক্ষোভ বিক্ষোভ রয়েছে।
৩. ২০১৪ সালের তুলনায় রাজ্যে কংগ্রেস কিংবা বাম দলগুলো অনেকটাই দুর্বল এবং কোথাও কোথাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছে। বিরোধী ভোটে ভাগ বসার সম্ভাবনা অনেকটাই কমেছে। তাই লড়াই সরাসরি।
৪. তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব গত পাঁচ বছরে অনেক গুণ বেড়েছে। এটা একটা বড় চিন্তা। অনেক আসনেই দলের মধ্যে অন্তর্ঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
৫. মুকুল রায় যতটা গর্জেছেন ততটা বর্ষাতে পারেননি। কয়েক জন মাত্র নেতা তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু দলের মধ্যে অবিশ্বাসের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। বিজেপি-ঘনিষ্ঠতা নিয়ে অনেকেই সন্দেহের ঊর্ধ্বে নন।
৬. গত লোকসভা নির্বাচনে জয়ী অনেক সাংসদই নিজের নিজের লোকসভা কেন্দ্রে সেভাবে কাজ করেননি। এটা তৃণমূলনেত্রী নিজেই স্পষ্ট করেছেন একগুচ্ছ কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে।
৭. গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট সেনাপতি ছিলেন মুকুল রায়। এখন তিনিই আবার প্রধান বিরোধী দলের নির্বাচনী প্রধান। বিজেপির হাতে মুকুল রায় থাকায় ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেক অতীত কৌশলই বদলাতে হচ্ছে তৃণমূলকে। নির্বাচন কমিশন থেকে আধা সামরিক বাহিনীকে প্রভাবিত করার ক্ষেত্রে বিজেপি এগিয়ে বলে মনে করেছেন অনেকেই।
৮. ২০১৪ সালের নির্বাচন পর্যন্ত এই রাজ্যে সেভাবে ধর্মীয় মেরুকরণ চোখে পড়েনি। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেটা মারাত্মকভাবে বেড়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলে সে ছবিও দেখা গিয়েছে কোথাও কোথাও। সম্প্রতি ভারত-পাক সম্পর্ক নতুন করে সেই ইস্যুকে জাগিয়ে তুলেছে। এটা তৃণমূলের জন্য অবশ্যই চিন্তার।
৯. এখনো তৃণমূল কংগ্রেসের বড় ভরসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা। তাতে সেভাবে খামতি দেখা না দিলেও দলের ভাবমূর্তিতে যে টান পড়েছে সেটা স্পষ্ট। সিন্ডিকেট থেকে গোষ্ঠী লড়াই বারবার সেটা সামনে এনে দিয়েছে।
১০. গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক আসনে বিনা ভোটে জয় পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। জেলায় জেলায় বহু মানুষ ভোট দিতেই পারেননি। লোকসভা নির্বাচনে আধা সামরিক বাহিনীর উপস্থিতিতে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে তারা কী করেন সেটা নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারবে না তৃণমূল শিবির।
সূত্র : ওয়েবসাইট