পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও বিক্ষোভে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাস ডেস্ক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক শিক্ষার্থীকে মারধর ও ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরসহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন ভিপি নুরুল হক নুরসহ প্রতিবাদী শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত পৌনে ৮টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি রাত পেরিয়ে আজ সকালেও চলছে।

সকালে ভিসি চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, ভিপি নুরসহ শিক্ষার্থীরা শুয়ে আছেন। এর আগে রাত পৌনে ৮টা থেকে সেখানে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন তারা। ‘সন্ত্রাসী হামলা’র বিচার না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে যাবেন বলে জানান।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন বলেন, ‘আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। সন্ত্রাসীদের সঙ্গে কোনো আপোষ নয়। তাদের বহিষ্কার করতে হবে।’

এর আগে রাত পৌনে ১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিচারের আশ্বাস দিয়ে ভিপি নুরুল হক নুরসহ প্রতিবাদী শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করার অনুরোধ জানান প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। কিন্তু শিক্ষার্থীরা প্রক্টরের আশ্বাসে ভরসা রাখেননি। তারা ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানকে ঘটনাস্থলে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার দাবি জানান। অনুরোধ না রাখায় এক পর্যায়ে রাত ২টার দিকে প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী চলে যান।

এদিকে নুরসহ শিক্ষার্থীদের হলে হামলাকারী আখ্যা দিয়ে বিচারের দাবিতে তাদের পাশেই পাল্টা অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগ। এ সময় তারা অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের কটূক্তি করে বিভিন্ন স্লোগান দেয়। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে পাল্টাপাল্টি এ অবস্থান ও বিক্ষোভ চলছে।

ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ‘এসএম হলে হামলা কেন প্রশাসন জবাব চাই’, ‘ভিপি নুরু সন্ত্রাসীদের গুরু’, ‘ছাত্রলীগের অ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘নুর বাহিনীর সন্ত্রাসীরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান দেন। এতে হল সংসদের ভিপি এমএম কামাল উদ্দিন ও জিএস জুলিয়াস সিজার রয়েছেন।

এদিকে এসএম হলে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরকে অবরুদ্ধ রাখার অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার তালুকদার। তিনি বলেছেন, নুরকে কেউ অবরুদ্ধ করেনি। এটা ভুয়া অভিযোগ।

মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এই কথা বলেন তিনি। জুলিয়াস বলেন, আমরা নুরকে বলেছি, হলে আসার আগে আপনার হল সংসদকে জানানো উচিত ছিল। তাছাড়া নুর এসএম হলে যখন গিয়েছিলেন, আমরা পূর্ণ সময় তার সঙ্গে ছিলাম। অবরুদ্ধ ব্যাপারটা আসবে কেন?

তিনি আরও বলেন, এসএম হলে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমরা সর্বোচ্চ হিসেবে ভিপিকে আশা করতে পারি। বাকিরা নয়। তার দাবি, নুরসহ অন্যারা যার জন্য হলে গিয়েছিলেন, তিনি একজন মাদক ব্যবসায়ী। অথচ তিনি এই ব্যবসায়ীকে পুনরায় হলে তুলতে চান। অথচ এর আগেই সাধারণ ছাত্ররা তাকে গণধোলাই দিয়ে বের করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, নুর যেভাবে হলে প্রবেশ করেছে, এটা ডাকসুর গঠনতন্ত্র নয়। তিনি অনেক হলের অনেকেকে নিয়ে প্রবেশ করেছেন। হলে কে থাকবে এটা কি কেন্দ্রীয় ডাকসু দেখবে নাকি হল সংসদ? প্রশ্ন করেন তিনি।

এদিকে শিক্ষার্থীকে মারধর ও ভিপি নুরুল হক নুরসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) সলিমুল্লাহ মুসলিম হল প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

উল্লেখ্য, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে এক শিক্ষার্থীকে মারধরের প্রতিবাদ করতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা দুই দফায় ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। হামলায় আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন তিনজন। তারা হলেন- উম্মে হাবিবা বেনজীর, আতাউল্লাহ, হাবীবুল্লাহ বেলালী।

শামসুন্নাহার হল সংসদের ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের ওপর বাজেভাবে হামলা চালিয়েছে। মেয়েদেরও ছাড় দেয়নি। আমরা এর বিচার না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে