আসছে পহেলা বৈশাখ, বাড়ছে কেনাকাটা

ডেস্ক রিপোর্ট

পহেলা বৈশাখ

আর মাত্র ১০ দিন পর পালিত হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। এরই মধ্যে বৈশাখ বরণে মেতে উঠেছে গোটা দেশ। পহেলা বৈশাখ ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে জমে উঠেছে শপিংমল, ফ্যাশন হাউস ও বিপণিবিতানগুলো। বাদ পড়ছে না ফুটপাতও।

বিভিন্ন ছাড় ও আকর্ষণীয় অফার দিয়ে দেশি ও বিদেশি ফ্যাশন হাউসগুলো হুলস্থূল ফেলে দিয়েছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই ব্যস্ত কেনাকাটায়।

universel cardiac hospital

বাংলার আবহে তৈরি ফতুয়া, পাঞ্জাবি, শার্ট, থ্রিপিস ও শাড়ি-গহনার পসরা সাজিয়েছে অভিজাত বিপণিবিতান থেকে ফুটপাতের দোকানিরা। এমনকি মাছসহ কাঁচাবাজারেও পড়েছে বৈশাখের উত্তাপ। অধিকাংশ বিপণিবিতান ক্রেতা আকর্ষণে দিচ্ছে মূল্য ছাড়, গিফটসহ নানা অফার। শপিংমলগুলোতে চলে এসেছে নববর্ষের বিশেষ পোশাক।

বিক্রেতারা জানান, বৈশাখ উপলক্ষে ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবাই সাধ্যমতো কেনাকাটা করেন। ঈদের মতো বৈশাখেও জমে উঠে বেচাকেনা। নগরীর বিভিন্ন শপিংমল ঘুরে দেখা গেছে, পরিবার-পরিজন ও বন্ধুবান্ধব নিয়ে ক্রেতারা ব্যস্ত বৈশাখী কেনাকাটায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফ্যাশন হাউজগুলো এবার বৈশাখ উপলক্ষে আরামদায়ক সুতি শাড়ি ও সুতি কাপড়ের কাপড়ের সালোয়ার কামিজ ও পাঞ্জাবির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। পোশাকে লাল-সাদার পাশাপাশি উজ্জ্বল রং যেমন- হলুদ, কমলা, মেরুন ও নীল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়েছে। মেয়েদের কামিজে অ্যামব্রয়ডারি ও টাই ডাই, ফুলেল প্রিন্টের কাজ করা হয়েছে। শাড়িতে অ্যামব্রয়ডারি, টাই ডাই এপ্লিকের কাজ রয়েছে। শাড়িগুলোর আঁচলে ঝুল ও বিভিন্ন আলপনা প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। আছে রঙিন জামদানি ও হাফ সিল্কের চেক শাড়িও।

এছাড়া স্লিম ফিটের সুতির পাঞ্জাবিতে এপ্লিকের কাজ, অ্যামব্রয়ডারি, মাল্টি কালার প্রিন্ট ব্যবহার করা হয়েছে। বৈশাখের সাজের সঙ্গে শাড়ি ও সালোয়ার কামিজের সঙ্গে মিলিয়ে ফ্যাশন হাউসগুলোতে আনা হয়েছে বিভিন্ন নকশার ব্যাগ, গহনা ও ঘর সাজানোর সামগ্রী।

এদিকে তরুণ প্রজন্ম প্রযুক্তির কল্যাণে অনলাইনে কেনাকাটায় জীবনকে করে তুলেছে গতিশীল। দিন দিন বাড়ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে কেনাকাটার প্রবণতা। নাগরিক জীবনের ব্যস্ততার নেই যেন অবসর। তাই অনেকেই ঘরে বসে অনলাইনে পছন্দের শাড়ি, জামা, পাঞ্জাবি কিনছেন। নিজের পছন্দমতো পণ্যটি বাছাই করে সিলেক্ট করে দিলেই কাজ শেষ।

শপিং করতে থাকছে ক্যাশ অন ডেলিভারি, ক্রেডিট-ডেবিট কার্ডসহ সব ধরনের অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা। অনলাইন স্টোর থেকে নির্ধারিত পণ্য ক্রয়ে দেশের যে কোনো প্রান্তে পণ্য পৌঁছে দেয়ার সুবিধা থাকায় চাহিদাও বাড়ছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানগুলো বাঙালির প্রাণের উৎসব ঘিরে সাদা-লালে ছেয়ে গেছে নানা ধরনের বৈশাখী আয়োজনে। নানা ডিজাইনের পোশাকের পাশাপাশি রয়েছে সাজ-শয্যার নানা আয়োজন। মার্কেটগুলো সাজানো হয়েছে পহেলা বৈশাখের আদলে।

পহেলা বৈশাখের খাবার তালিকার শীর্ষে অবস্থান করছে ইলিশ। নগরীর সুপারশপগুলোর পাশাপাশি ফেরি করে বিক্রি করা হচ্ছে ছোট-বড় নানা আকারের ইলিশ। দাম একটু চড়া হলেও সবাই সাধ্যমতো কেনার চেষ্টা করছেন। বৈশাখ উপলক্ষে শহরে-বন্দরে, গ্রামগঞ্জে বিভিন্ন ধরনের মেলা বসে। প্রায় সপ্তাহব্যাপী চলে এ মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের খেলনাসামগ্রী, মিষ্টিজাতীয় পণ্য, তৈজসপত্র, আসবাবপত্রসহ নানা ধরনের পণ্যের সমাবেশ ঘটে।

ব্যবসায়ীরা জানান, ক্রেতা আকর্ষণে এখন মুঠোফোনে কথা বলা থেকে ইন্টারনেট চালানো, কেনাকাটা সব ক্ষেত্রেই দেয়া হচ্ছে বিশেষ অফার বা বিশেষ ছাড়। এমনকি টেলিভিশন, ফ্রিজ, গাড়ি ও বাড়িতেও থাকছে লোভনীয় বৈশাখী ঝড়ো অফার।

বৈশাখ ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানের ফুল ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চাঙ্গা হয়। মানুষ সব কিছুর সঙ্গে ফুলও কেনেন। নিজেকে ও ঘর সাজাতে এবং উপহার হিসেবে ফুল উন্নত রুচির বহির্প্রকাশ। ফুলের কোনো বিকল্প নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিন রাজধানীতে পাইকারি বাজারে ৩০-৩৫ লাখ টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। তবে পহেলা বৈশাখের মতো বিশেষ দিবসে ফুলের বাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। বৈশাখ উপলক্ষে বাদ পড়ে না ফলের বাজারও। বৈশাখ উপলক্ষে গ্রীষ্মকালী ফল বিশেষ করে কাঁচা আম, তরমুজ, বাঙ্গি, লেবু, আতা ইত্যাদির চাহিদা বাড়ে। চাহিদা অনুযায়ী দামও বাড়ে, তবু দমেন না ক্রেতারা। নতুন বাংলা নববর্ষের আগমন উপলক্ষে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণে এতটুকু ঘাটতি রাখতে নারাজ নগরবাসী।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে