ব্রেক্সিট: আরও সময় চাইবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

থেরেসা মে
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ফাইল ছবি

ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যেতে আরেক দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা  মে৷ এজন্য চুক্তির বিষয়ে বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি৷

ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে সৃষ্ট জটিলতার কোনো জট খুলতে পারছেন না ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে৷ ফলে এখন চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট কার্যকরের পথে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি, যা এড়াতে মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে আরেক দফা সময় বাড়ানোর আবেদন করবেন৷ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে সাত ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠকের পর এমন আভাস দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷ নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী আগামী ১২ এপ্রিল ব্রেক্সিট কার্যকরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে৷ খবর ডয়চে ভেলের।

universel cardiac hospital

টেলিভিশনে দেয়া এক বক্তৃতায় থেরেসা মে বলেন, ‘আর্টিকেল ফিফটি কার্যকরে আমাদের আরেক দফা সময় বাড়ানোর আবেদনের প্রয়োজন হবে৷ এটি হবে স্বল্প সময়ের জন্য এবং এটি শেষ হবে চুক্তি পাসের মাধ্যমে৷’

তবে কোনো পরিষ্কার পরিকল্পনা ছাড়া সময় বাড়ানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই সময়সীমা কেন বৃদ্ধি করা হবে, সে বিষয়ে আমাদের পরিষ্কার হতে হবে, যাতে আমরা নির্দিষ্ট সময় এবং একটি নিয়মের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসতে পারি৷’

এদিকে, ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে আপাতত তিনটি সম্ভাবনা খোলা রয়েছে ব্রিটেনের জন্য৷ সেক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কোনো চুক্তি ছাড়াই ১২ এপ্রিল ব্রিটেন বের হয়ে আসবে৷ কট্টর ব্রেক্সিটপন্থিরা প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের ওপর সেই পথ বেছে নিতে চাপ দিচ্ছেন৷ প্রধানমন্ত্রী চতুর্থবারের মতো সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের চেষ্টা চালাতে পারেন৷ তবে তার জন্য স্পিকারের সম্মতি ও প্রয়োজনীয় ঐকমত্য অর্জন করা প্রয়োজন৷ সেই প্রচেষ্টায় আবার ব্যর্থ হলে মে ইইউর কাছে দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে ব্রেক্সিট মূলতুবি রাখার আবেদন জানাতে পারেন৷ সেক্ষেত্রে ব্রিটেনকে আসন্ন ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচনে অংশ নিতে হবে৷

সব মিলিয়ে কীভাবে ব্রেক্সিট কার্যকর করা হবে তা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে যেমন মতৈক্য নেই, তেমনি নিজ দলের ভেতরেও মে প্রয়োজনীয় সমর্থন পাচ্ছেন না৷ এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তিনি কাটাতে চান বলে ঘোষণা দিয়েছেন৷ মে বলেন, ‘আমি এই অচলাবস্থা ভাঙার উদ্যোগ নিচ্ছি৷ বিরোধী দলের নেতার সঙ্গে আমি বসতে চাই৷ একটি পরিকল্পনা বিষয়ে একমত হতে চাই, যা ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে৷’ চুক্তির মধ্য দিয়েই ব্রেক্সিট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে তিনি তার অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘ইইউর সঙ্গে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কী হবে, সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতে হবে৷’

মে বলেন, তিনি বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি চুক্তি সংসদে অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করতে চান৷ প্রয়োজনে আবারও একাধিক প্রস্তাব নিয়ে সংসদে যাওয়ার কথা বলেন তিনি৷

মের আলোচনার প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন বিরোধী দলীয় নেতা জেরেমি করবিন৷ তিনি আগ্রহ নিয়েই মের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে উল্লেখ করেন৷ যদিও সমালোচনা করে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত মে সমঝোতার তেমন কোনো লক্ষণ দেখাননি৷ ইউরোপের সঙ্গে বিচ্ছেদ পরবর্তী সম্পর্ক নিয়ে মতবিরোধ থাকলেও একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট কার্যকরের বিষয়ে তিনি মের সঙ্গে একমত৷

লেবার পার্টি প্রধান বলেন, ইইউর সঙ্গে অবশ্যই চুক্তিবিহীন ব্রেক্সিট এড়াতে হবে যাতে ব্রিটেনের জনগণ বিপর্যয়ে না পড়ে৷ লেবার পার্টির পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব তুলে ধরার কথাও বলেছেন করবিন, যাতে পরিবেশ সংরক্ষণ ও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার মাধ্যমে ইইউর সঙ্গে ব্রিটেনে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে জোর দেয়া হবে৷

ব্রেক্সিটকে ঘিরে ব্রিটেনের চলমান অচলাবস্থায় হতাশ ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ তবে মের নতুন উদ্যোগের ঘোষণা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ইউরোপীয় কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্ক, যা বিবেচনায় নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি ধৈর্য্য ধরার আহবান জানান৷ ডাউনিং স্ট্রিটে মে বক্তৃতা দেয়ার পরই একটি টুইট বার্তায় এই অভিমত প্রকাশ করেন তিনি৷ যার মাধ্যমে মের কাছ থেকে একটি পরিষ্কার পরিকল্পনা শুনতে ইইউর অপেক্ষার বিষয়টির ইঙ্গিত মিলছে৷ টুস্ক টুইটবার্তায় বলেছেন, ‘এমনকি আজকের পরও আমরা জানি না চূড়ান্ত ফলাফল কী হবে, আসুন আমরা সবাই ধৈর্য্য ধরি।’ ইউরোপের দেশগুলো বরাবরই চুক্তির মাধ্যমে বিচ্ছেদ কার্যকরের উপর জোর দিয়ে আসছে৷

জার্মানির অর্থমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার বলেন, ‘ইইউ এবং ব্রিটেন শেষ মুহূর্তেও একটি চুক্তির মাধ্যমে বিপর্যয় এড়াতে পারে৷ কেননা এর সঙ্গে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের বিষয় জড়িত।’

দেশটির দৈনিক সংবাদপত্র দ্যা বিল্ডকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রিটেনকে বিচ্ছেদ কার্যকরে প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় দেয়ার পক্ষে নিজের মত তুলে ধরেন তিনি৷ তবে শেষ পর্যন্ত ব্রিটেন চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ ঘটালে তার ধাক্কা সামাল দিতে জার্মান সরকার বিশদ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বলেও জানান তিনি৷

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে