একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো সময় পেরিয়ে গেলেও তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেয়নি। গত ৩১ মার্চ এই হিসাব জমা দেওয়ার সময়সীমা শেষ হয়ে গেছে। ইসি এখন দলগুলোকে সতর্ক করে নোটিশ দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রার্থীদের অনেকে এখন পর্যন্ত তাঁদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে পাঠাননি বলে জানা গেছে। আইন অনুযায়ী এর সময়সীমা ৩০ জানুয়ারি শেষ হয়ে গেছে। ইসি সচিবালয় থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ৪৪ সিসিসি ধারায় বলা আছে, প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিতে হবে।
৪৪ডি ধারায় বলা আছে, কোনো দল ৯০ দিনের মধ্যে ব্যয়ের হিসাব জমা দিতে না পারলে ইসি তাদের সতর্ক করে নোটিশ দিয়ে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। এই সময়ের মধ্য কোনো দল হিসাব জমা দিতে ব্যর্থ হলে ইসি তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে হিসাব জমা দেওয়ার নির্দেশ দিতে পারবে। কোনো এই ধাপেও ব্যর্থ হলে ইসি সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি, জাতীয় সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলই এই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। আইন অনুযায়ী এসব দলের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেওয়ার সময়সীমা গত ৩১ মার্চ শেষ হয়েছে।
সাধারণত এ ধরনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ইসি সচিবালয় থেকে দলগুলোকে তাগিদপত্র দেওয়া হয়। কিন্তু এবার ইসি সচিবালয় থেকে সে ধরনের কোনো চিঠি দলগুলোকে দেওয়া হয়নি। ইসি সচিবালয় সূত্র জানায়, কমিশনের সর্বশেষ বৈঠকে একজন নির্বাচন কমিশনার এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিষয়টি তাদের গোচরে আসে। যে কারণে ইসি সচিবালয় এখন দলগুলোকে তাগিদপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ বিষয়ে সচিবালয়ের কাছে জানতে চেয়েছি, কতটি দল এবং কতজন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দিয়েছে। সচিবালয় বলেছে, মোটামুটি সবাই দিয়ে দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা কোনো উত্তর হলো না। পরিষ্কার করে জানাতে হবে, কতটি দল হিসাব জমা দিয়েছে, কতটি দেয়নি এবং কতজন প্রার্থী হিসাব ইসিতে পাঠিয়েছেন এবং কতজন পাঠাননি। এ বিষয়ে কমিশনের পরবর্তী বৈঠকে একটি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’
আরপিওর ৪৪সি ধারা অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনের বিজয়ী প্রার্থীদের নাম গেজেট প্রকাশের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাববিবরণী রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হয়। একই সময়ে হিসাববিবরণীর একটি অনুলিপি সত্যায়িত করিয়ে ডাকযোগে (রেজিস্টার্ড) ইসিতে পাঠাতে হবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীদের নাম গেজেটে প্রকাশ হয়েছিল গত ১ জানুয়ারি। এই হিসেবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ৩১ জানুয়ারির মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দেওয়ার কথা। আর এই হিসাব বিবরণী ইসিতে যে তারিখেই এসে পৌঁছাক না কেন, তা ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই ডাকঘরে গিয়ে রেজিস্টার্ড করতে হবে।
ইসি সচিবালয়ের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, প্রার্থীদের অনেকই ব্যয়ের হিসাব ইসিতে পাঠিয়েছেন। তবে সেই প্রার্থী কারা এবং কতজন, সেই সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।
২০০৮ ও ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের শেষেও প্রার্থীদের অনেকে নির্বাচনী ব্যয়ের হিসাব ইসিতে জমা দেননি। তবে ইসি এসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের মাধ্যমে আদালতে মামলা করেছিল।