চিকিৎসার ৬৭% খরচ বহন রোগীকেই করতে হয়

বিশেষ প্রতিনিধি

রোগীকেই চিকিৎসার ৬৭% খরচ বহন করতে হয়
রোগীকেই চিকিৎসার ৬৭% খরচ বহন করতে হয়


নিজের চিকিৎসা খরচ পকেটের টাকায় চালাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে।

এখনও চিকিৎসার জন্য এখনো রোগীকেই ৬৭ শতাংশ অর্থ খরচ করতে হয়। বাকি ২৩ শতাংশ টাকা দেওয়া হয় রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনার (সরকার-দাতা সংস্থা) মাধ্যমে।

এ ছাড়া স্বাস্থ্য বীমাও এখন পর্যন্ত জোরাল কোনো ভিত্তিতে আসছে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ হাঁটছে অনেকটা খুঁড়িয়ে। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার পালিত হলো বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘সমতা ও সংহতিনির্ভর সর্বজনীন প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা’।

universel cardiac hospital

জানা গেছে, নিজের চিকিৎসা খরচ পকেটের টাকায় চালাতে গিয়ে বছরে ৪ শতাংশ পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। আবার অনেকে সম্পূর্ণ চিকিৎসা না করাতে পেরে মৃত্যুর কাছে জীবন সঁপে দিচ্ছে, যা সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষার পথে বড় বাধা হয়ে আছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দেশে প্রাইমারি হেলথ কেয়ারের মূল জায়গা হচ্ছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক। সরকারের এই কাঠামোগুলো মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার বড় ভিত্তি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই কাঠামোগুলোর কোনোটিই নানা সীমাবদ্ধতার কারণে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর হতে পারছে না।

তিনি  আরও বলেন, রোগী নিজের পকেট থেকে ৬৭ শতাংশ টাকা দিতে গিয়ে কেউ ঘরবাড়ি বিক্রি করছে, কেউ ঋণগ্রস্ত হচ্ছে। আবার কেউ এসব করেও চিকিৎসা শেষ করতে পারে না। ৪ শতাংশ পরিবার বা ৫০ লাখ মানুষ চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে এক পর্যবেক্ষণ থেকে আমরা দেখতে পেয়েছি—শুধু মাঠপর্যায়ের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা উপযুক্ত মানে কার্যকর করতে পারলে বছরে মানুষের পকেট খরচের প্রায় চার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।

ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, উপজেলা থেকে রোগীদের জেলা বা বিভাগীয় শহর কিংবা রাজধানীতে ছোটাছুটি অনেকাংশে কমে যাবে; খরচও কমে যাবে, বাড়ির কাছে অনেক সমস্যার সমাধান পাবে। এ জন্য প্রয়োজন মাঠপর্যায়ে চিকিৎসাসেবা জনবল ঘাটতি দূর করা, শূন্যপদ পূরণ করা, মাঠপর্যায়ে চিকিৎসক-কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, যন্ত্রপাতি সচল রাখা, ওষুধ ব্যবস্থাপনাকে নিরাপদ করা, বরাদ্দের ক্ষেত্রে সমবণ্টন না করে প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া, পুরনো অবকাঠামোকে আধুনিকায়ন এবং তদারকি ব্যবস্থাকে কঠোরভাবে কার্যকর করা।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের কালিহাতী, মধুপুর ও ঘাটাইলে দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারীদের জন্য সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় একটি পাইলট হেলথ ইনস্যুরেন্স কার্ড ব্যবস্থা চালু হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কার্ডধারী ব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা চিকিৎসার প্রয়োজনে হাসপাতালে ভর্তি হতে পারবে এবং ৫০টি রোগের (রোগ নির্ণয়, ওষুধ, পথ্যসহ) পূর্ণ চিকিৎসা বিনা মূল্যে পাবে।

সূত্র মতে, এসব চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহের জন্য পরিবারপ্রতি বার্ষিক এক হাজার টাকা প্রিমিয়াম হিসেবে সরকার দেবে, যার বিনিময়ে প্রতিটি পরিবার বার্ষিক সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা সুবিধা লাভ করবে। পাইলট চলাকালে এই প্রিমিয়ামের অর্থসহ প্রকল্পের যাবতীয় ব্যয় স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি উন্নয়ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সংস্থান করা হবে। পরবর্তী সময়ে সরকারি বরাদ্দ এবং সচ্ছল পরিবারের কাছ থেকে প্রিমিয়াম সংগ্রহের মাধ্যমে কর্মসূচিটির অর্থায়ন করা হবে। এর আগে সরকার সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার উদ্যোগ হিসেবে ‘হেলথ কেয়ার ফাইন্যান্সিং স্ট্র্যাটেজি ২০১২-২০৩২’ হাতে নেয়।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যসচিব গণমাধ্যমকে বলেন, টাঙ্গাইলের তিন উপজেলার কাজ চলছে, এবার আরো ১০টি উপজেলায় আমরা স্বাস্থ্যবীমার আদলে ওই হেলথ কার্ড কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।


স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী, কর্মসূচি

এদিকে আজ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। এ ছাড়া এ উপলক্ষে সকালে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেছেন, বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাস্থ্যসেবা সব স্তরে জনগণের জন্য আরো সহজলভ্য ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বাণীতে বলেন, আমাদের সরকার দেশের স্বাস্থ্যসেবা উন্নয়ন ও মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সমাজের সব স্তরের জনগণের প্রয়োজনীয় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রাপ্তি সহজলভ্য হয়েছে। গত ১০ বছরে স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ও গ্যাভি অ্যাওয়াডের্র মতো আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে