রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকারকে বলবো-এক মাঘে শীত যায় না। পরিস্থিতি সব সময় এক থাকে না। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। সময় বদলাতে তো সময় লাগে না।
বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেছেন, কারাবন্দি ও অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও জামিনে বাধা প্রদানের পেছনে সরকারের গভীর ভয়ংকর নীলনকশা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, এই অবৈধ প্রধানমন্ত্রী চাচ্ছেন দেশনেত্রীকে হয় দুনিয়া থেকে না হয় রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে। গত কয়েকদিন ধরে সরকারদলীয় লোকদের মিডিয়া এবং মন্ত্রী ও তাদের নেতাদের কথাবার্তায় মনে হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার প্যারোল নিয়ে তাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। দেশনেত্রীর চিকিৎসার জন্য প্যারোলে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের বক্তব্য এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ সাহেবের বক্তব্য বিপরীতধর্মী, এতে বোঝা যায় তারা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও চিকিৎসা নিয়ে নিষ্ঠুর তামাশা করছেন।
সোমবার (৮ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের মানুষের প্রাণপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি দাবি করে রিজভী বলেন, পিজি হাসপাতালে তার চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা নেই। ডাক্তারদের দিয়ে গঠিত বোর্ড তার রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসায় কোনো অগ্রগতি নেই। তারাও স্বীকার করছেন দেশনেত্রীর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসছে না। আমরা জেনেছি, তিনি একেবারেই হাঁটাচলা করতে পারছেন না। ডায়াবেটিস, জটিল অন্যান্য রোগ ও চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত বেগম খালেদা জিয়া এখন গুরুতর অসুস্থ। সরকার তার বড় ধরনের কোনো ক্ষতি করার জন্য সময়ক্ষেপণ করছে কি-না এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন গভীরতর হচ্ছে। তবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ক্ষতিকর কিছু হলে এর দায় সরকারকেই নিতে হবে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আমরা (বিএনপি) দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলতে চাই- নিঃশর্তভাবে দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। তাকে সাজানো মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দি রাখা হয়েছে। জামিন পাওয়া তার নাগরিক অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। নতুন নতুন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেয়া হচ্ছে। আসলে মামলা কিছু নয়, আসল উদ্দেশ্য দেশনেত্রীকে তিলেতিলে শেষ করা অথবা চিরজীবনের জন্য রাজনীতির ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়া এবং তাদের উদ্দেশ্য সফল না হওয়া পর্যন্ত বন্দি করে রাখা। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী থেকে শুরু করে তাদের প্রিয়ভাজন ব্যক্তিরা একই ধরনের মামলায় জামিনে আছেন।
রিজভী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকারকে বলবো-এক মাঘে শীত যায় না। পরিস্থিতি সব সময় এক থাকে না। নিজেদের ভবিষ্যতের কথা ভাবুন। সময় বদলাতে তো সময় লাগে না। মানুষের আওয়াজ শুনুন। পায়ে পা মিলিয়ে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রস্তুত হচ্ছে জনতা। ফুঁসছে মানুষ। জনতার আদালত তৈরি হচ্ছে। তাই নিজেদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে চক্রান্ত ষড়যন্ত্র বন্ধ করে দ্রুত দেশনেত্রী জনগণের আস্থার প্রতীক বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিতে আর বাধা দিবেন না। জনগনের নেত্রীকে জনগণের মাঝে ফিরতে দিন।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আগের রাতে অন্ধকারের ভোটে ক্ষমতায় চেপে বসা অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিথ্যা বলতে বলতে সত্য বলা ভুলে গেছেন। মুখস্ত করা কবিতার মতো অবলীলায় তিনি গড়গড় করে মিথ্যা বলতে পারেন। গত ৫ এপ্রিল গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- ‘বিএনপি থেকে চিৎকার করা হচ্ছে, তাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। অথচ বিএনপির কারো বিরুদ্ধে একটিও মিথ্যা মামলা করা হয়নি’। প্রধানমন্ত্রীর একথাটি শুনে একটি প্রবাদ মনে পড়ে যায়-অল্পশোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর। তার এই পর্বতসমান মিথ্যা বক্তব্যে দেশের মানুষ পাথর হয়ে গেছে। এতো মিথ্যা কীভাবে মানুষ বলতে পারে তা রীতিমত বিস্ময়কর-অকল্পনীয়। আপনারা জানেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে ১ লাখের বেশি মিথ্যা মামলায় আসামি ২৫ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ২৫ হাজার গায়েবি মামলা।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূইয়া, শাহিদা রফিক, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।