ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টায় দগ্ধ ফেনীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন।
সোমবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘মেয়েটির অবস্থা ভালো না। সোমবার সকালের তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ দিকে চলে যায়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। আমরা তার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছি।’
শনিবার সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে যায় ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুর ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়। পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
গতকাল রোববার তার চিকিৎসায় ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর ওপর এমন নির্মমতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারেরও নির্দেশ দিয়েছেন। সন্ধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নুসরাতকে দেখতে যান।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
এদিকে এ ঘটনায় রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলছেন, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার। আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেওয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।
ছাত্রীর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান সমকালকে বলেছেন, তার বোনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পূর্বপরিকল্পিত। অন্যান্য দিন তিনি বোনকে কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও শনিবার তাকে কেন্দ্রেই ঢুকতে দেওয়া হয়নি। মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী মোস্তাফা বাধা দেন তাকে। এর আগে সকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফসার উদ্দীন ফোনে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন। এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি তো ছিলই। এসব হুমকিতেও মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বোনকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগুন ধরিয়ে দেওয়ায় জড়িত চারজনের মধ্যে একজনই কথা বলেছে। তার বোন কণ্ঠটি চিনতে পারলেও পুরোপুরি শনাক্ত করতে পারেনি।