কক্সবাজারে আশ্রিত রোহিঙ্গারা সহিংস হয়ে উঠছে

ডেস্ক রিপোর্ট

রোহিঙ্গা
ফাইল ছবি


আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনা বাড়ছে। তুচ্ছ ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত এই মানুষেরা

কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে দিনতে দিন সহিংসতা বাড়ছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সংঘর্ষ, মুক্তিপণ আদায়, ইয়াবা ব্যবসা-এসবকে কেন্দ্র করে সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে স্বীকার করছেন আশ্রয় শিবির এবং পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাগণ।

তারা জানিয়েছেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতের ঘটনা বাড়ছে। তুচ্ছ ঘটনায় হামলা, সংঘর্ষ, প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া এবং খুনসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে মিয়ানমারের বাস্তুচ্যূত এই মানুষেরা। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয় বাসিন্দাসহ  প্রশাসনের।

universel cardiac hospital

মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা নিজ দেশে গত কয়েক দশক ধরে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে অবস্থান করছে। জাতিসংঘের উদ্বাস্ত কমিশন এবং বিভন্ন আন্তর্জাতাক সংস্থা এদের জন্য আবাসন, খাদ্য ও চিকিৎসার সাহায্য দিয়ে আসছে। এদিকে রোহিঙ্গোদের মাঝে  অপরাধমূলক কর্মকান্ড বেড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে কুতুপালং ক্যাম্প- ইন-চার্জ মহম্মদ রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ভালো কোন পরিবেশে বসবাসের সুযোগ না থাকার কারণে তাদের মধ্য ছোট-খাট বিষয় নিয়ে সংঘাত বাড়ছে। এর সাথে রয়েছে কিছু সন্ত্রাসীগ্রুপের তৎপরতা এবং  ইয়াবা ব্যবসা  সংক্রান্ত বিরোধ ।


গত দেড়বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩০ জন মারা গেছে নানা ঘটনায়। অপহরণের শিকার ৩৭ জন। মোট ২৯৯টি ঘটনায় আসামী হয়েছে ৬১৮জন। কেবল নিজেদের মধ্যেই নয় স্থানীয় আর বিদেশিদের ওপরও মাঝে মাঝে চড়াও হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাও ঘটছে।

শুধু তাই নয় কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দা, বিভিন্ন এনজিও কর্মী এমনকি পুলিশের উপরও রোহিঙ্গাদের হামালার অভিযোগ পাওয়া গেছে। যদিও এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত  পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মহম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গাদের মাঝে  অপরাধমূলত কর্মকান্ড বাড়ছে।  তবে তা তেমন উদ্বেগজনক কিছু নয়। কক্সবাজারে  আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য আলাদাভাবে পুলিশের প্রায় একহাজার সদস্যের ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। তাছাড়া , নতুন করে একটি আর্মড ব্যাটেলিয়ন গড়ে তোলা হচ্ছে। কক্সবাজারের স্থানীয়  অধিবাসীরা  আশঙ্কা  করছেন, এখনই রোহিঙ্গাদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে তা ভয়ংকর রূপ নেবে, সেইসাথে কক্সবাজার অঞ্চলে নিরাপত্তা সংকট তৈরি হবে।

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় , গত দেড়বছরে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৩০ জন মারা গেছে নানা ঘটনায়। অপহরণের শিকার ৩৭ জন। মোট ২৯৯টি ঘটনায় আসামী হয়েছে ৬১৮জন। কেবল নিজেদের মধ্যেই নয় স্থানীয় আর বিদেশিদের ওপরও মাঝে মাঝে চড়াও হচ্ছে রোহিঙ্গারা। ইতোমধ্যে র‌্যাব ও পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ ঘটনায় শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাতে টেকনাফের মুছনী রোহিঙ্গা শিবিরের হাবিরঘোনা পাহাড়ে পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে তিন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, তারা চিহ্নিত সন্ত্রাসী।

নিহতরা হলেন নূর আলম (২৩), মোহাম্মদ জুবায়ের (২০) ও হামিদ উল্লাহ (২০)। তাঁরা তিনজনই নিবন্ধিত নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরে বাসিন্দা। পুলিশ বলেছে, নিহতরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ আশপাশের এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, অপহরণ ও মাদক পাচারসহ নানা অপরাধ সংঘটন করত।  তাদের  বিরুদ্ধে খুন, ডাকাতিসহ নানা অভিযোগে থানায় অন্তত: পাঁচটি মামলা রয়েছে।

স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের দাবি, ক্যাম্পের ভেতরেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন গ্রুপ। ক্যাম্পের ভেতরে এবং আশে-পশে সংঘটিত  বেশিরভাগ অপরাধের  ঘটনাই পরিকল্পিত। যার উদ্দেশ্য, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন এবং  ভাসানচরে স্থানান্তর প্রক্রিয়া বানচাল করা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে