বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত আসামি রাশেদ চৌধুরীকে অবিলম্বে ফেরত দেয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রাশেদ চৌধুরী বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ে আছেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর আগেই এই খুনিকে ফেরত চায় বাংলাদেশ।
ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বাংলাদেশ এ আহ্বান জানায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জানুয়ারিতে ফের সরকার গঠনের পর ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে এটাই প্রথম বাংলাদেশের রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আবদুল মোমেনেরও এটা প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর।
বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সার্বিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার শামীম আহমেদ সোমবার রাতে বলেন, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে ৩৫ মিনিট স্থায়ী বৈঠক হয়েছে। বৈঠক অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে ফলপ্রসূ হয়েছে। অনেক ইস্যু বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
প্রেস মিনিস্টার আরও বলেন, বাংলাদেশের তরফে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেই ফেরত চাওয়া হয়েছে। পম্পেওকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশই আইনের শাসনে বিশ্বাস করে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার আইনের মাধ্যমে হয়েছে। এ বিচার কার্যকর করা আইনের শাসনের অংশ। ফলে এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের সহজ সুযোগ রয়েছে। নতুন করে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল করা হয়েছে। এসব অঞ্চলে বিভিন্ন দেশ বিনিয়োগ করছে। যুক্তরাষ্ট্রও বিনিয়োগ করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল।
বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও ব্যবসা বৃদ্ধি পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রযুক্তি হস্তান্তর করে সহায়তা করুক এটা বাংলাদেশ চায়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশ কটন আমদানি করতে চায়। কারণ বাংলাদেশ টেক্সটাইল উৎপাদনকারী দেশ।
বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয় আলোচনা হয়েছে জানিয়ে শামীম আহমেদ বলেন, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহায়তা করছে।
তবে বাংলাদেশ চায় যুক্তরাষ্ট্র যেন মিয়ানমারকে আরও জোরালো চাপ দেয়, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে স্বেচ্ছায় মিয়ানমারে তাদের মাতৃভূমিতে ফিরে যেতে পারে।
জ্বালানি ও গ্যাস খাতেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বৈঠকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ জিরো টলারেন্স দেখায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন বৈঠকে আলোচনাকালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরে আমন্ত্রণ জানান। মোমেন এ সময় আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাংলাদেশ সফর করলে আমরা খুবই খুশি হব।