ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে আগুনে দগ্ধ সেই মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা এই তরুণীর অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
অস্ত্রোপচার শেষে সংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার নাসিরউদ্দীন এবং বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারির বিভাগীয় প্রধান আবুল কালাম।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে লাইফ সাপোর্টে রেখেই নুসরাতের শরীরে অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানান তারা।
নাসিরউদ্দীন বলেন, আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি রোগী ফিরে আসবে। এ ক্ষেত্রেও একই প্রত্যাশা করি।
তিনি বলেন, দগ্ধ ছাত্রীর শরীরে বেশ কিছু জটিলতা দেখা দিয়েছে। রক্ত ও ফুসফুসে সংক্রমণ ছাড়াও তার কিডনিতে কিছুটা সমস্যা দেখা দিয়েছে। মেয়েটিকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি।
আবুল কালাম বলেন, ফুসফুসকে সক্রিয়তা দিতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আজ রোগী কিছুটা ভালো। সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে অস্ত্রোপচারটি করা হয়।
গত শনিবার সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথম পত্র পরীক্ষা দিতে সোনাগাজীর ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান ওই ছাত্রী। এরপর কৌশলে তাকে পাশের ভবনের ছাদে ডেকে নেয়া হয়। সেখানে ৪/৫ জন বোরকা পরিহিত ব্যক্তি ওই ছাত্রীর শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে যায়।
পরে ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে সোনাগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠান। সেখান থেকে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়।
রোববার তার চিকিৎসায় ৯ সদস্যের বোর্ড গঠন করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরীক্ষা কেন্দ্রে ছাত্রীর ওপর এমন নির্মমতায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সার্বিক চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেছেন। পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেফতারেরও নির্দেশ দিয়েছেন।
সোমবার নুসরাত জাহান রাফি ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ (মৃত্যুশয্যায় দেয়া বক্তব্য) দেন। নুসরাত তার বক্তব্যে বলেছেন, ওড়না দিয়ে হাত বেঁধে তার শরীরে আগুন দেয়া হয়। আগুনে ওড়না পুড়ে গেলে তার হাত মুক্ত হয়। বোরকা, নেকাব ও হাতমোজা পরা যে চার নারী তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেন, তাদের একজনের নাম সম্পা বলে জানান নুসরাত।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
ওই ছাত্রীর স্বজনরা বলেন, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা নুসরাতকে নিজের কক্ষে ডেকে নিয়ে শ্নীলতাহানি করেন। ওই ঘটনায় থানায় মামলা করেন তার মা। ওই মামলায় অধ্যক্ষ কারাগারে রয়েছেন। মামলা তুলে নিতে অধ্যক্ষের লোকজন হুমকি দিয়ে আসছিল বারবার।
তারা জানান, আলিম পরীক্ষা চললেও আতঙ্কে স্বজনরা পরীক্ষা কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। মামলা তুলে না নেয়াতেই ক্ষিপ্ত হয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় নুসরাতকে।
ছাত্রীর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, তার বোনের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া পূর্বপরিকল্পিত। অন্যান্য দিন তিনি বোনকে কেন্দ্রের কক্ষ পর্যন্ত পৌঁছে দিলেও শনিবার তাকে কেন্দ্রেই ঢুকতে দেয়া হয়নি। মাদ্রাসার নিরাপত্তাকর্মী মোস্তাফা বাধা দেন তাকে। এর আগে সকালে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফসার উদ্দীন ফোনে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেন।
তিনি বলেন, এ ছাড়া নিয়মিত হুমকি তো ছিলই। এসব হুমকিতেও মামলা তুলে নিতে রাজি না হওয়ায় পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার বোনকে হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।