মাদ্রাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার মামলায় ‘শম্পা’ আটক

ডেস্ক রিপোর্ট

দগ্ধ নুসরাত জাহান
দগ্ধ নুসরাত জাহান। ছবি : সংগৃহিত


পুলিশ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থীকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হতাচেষ্টায় আলোচিত শম্পা সন্দেহে এক ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে।

আজ মঙ্গলবার তাকে আটক করা হয়েছে বলে সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন।

universel cardiac hospital

এর আগে মঙ্গলবারই ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানিয়েছিলেন, অগ্নিদগ্ধের সময় কেউ একজন ‘শম্পা চল’ বলেছে এমন শব্দ শুনেছেন বলে দগ্ধ ওই ছাত্রী (নুসরাত জাহান রাফি) চিকিৎসকদের কাছে তথ্য দিয়েছেন।

সেই সূত্রে পুলিশ তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। শম্পা ওই মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী। পুলিশ ওই ঘটনায় এ পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করেছে।


আটক হওয়া শম্পা অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার শ্যালিকার মেয়ে

এরপরই খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুলিশের হাতে আটক শম্পার প্রকৃত নাম উম্মে সুলতানা পপি। তিনি সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে।

তিনি ওই মাদ্রাসাছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় গ্রেফতার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ্দৌলার শ্যালিকার মেয়ে। পপি একই মাদ্রাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিচ্ছেন।

বিষয়টি জানতে সোনাগাজী-দাগনভূঞা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, চিকিৎসকদের কাছে দেয়া অগ্নিদগ্ধ ওই ছাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে আলিম পরীক্ষার্থী শম্পাকে আটক করে পুলিশ। তবে আটক ছাত্রী ছদ্মনাম হিসেবে শম্পা ব্যবহার করেছে কিনা সেটি জিজ্ঞাসাবাদেই জানা যাবে।

উল্লেখ্য, ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রের ভেতর ওই ছাত্রীর (১৮) গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে হত্যাচেষ্টা চালায় দুর্বৃত্তরা। শনিবার সকালে সোনাগাজী পৌর এলাকার ইসলামিয়া সিনিয়ার ফাজিল মাদ্রাসাকেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই ছাত্রী ওই মাদ্রাসা থেকেই আলিম পরীক্ষা দিচ্ছিলেন।

পরীক্ষার জন্য নির্ধারিত কক্ষ থেকে ছাদে ডেকে নিয়ে কয়েকজন বোরকাপরা নারী পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষার্থীর পরিবারের সদস্যরা।

তারা জানান, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে দায়ের করা মামলা তুলে না নেয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে।

এ তথ্য ফেনী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্থানীয় পুলিশকেও জানিয়েছেন ওই শিক্ষার্থী। তার অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় এদিন বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের ১০২ নম্বর কক্ষে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়।

পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধাঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ। পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।

সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে নাশকতা, যৌন হয়রানি ও চেক জালিয়াতিসহ ফেনী এবং সোনাগাজী মডেল থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে