মুন্সীগঞ্জে পাওয়া গেছে পিরামিড আকৃতির প্রাচীন বৌদ্ধ স্তূপ। টঙ্গিবাড়ি উপজেলার নাটেশ্বর এলাকায় এ বৌদ্ধ স্তূপের সন্ধান পেয়েছেন প্রত্নতত্ববিদরা।
জানা যায়, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রত্নতাত্বিক খননে প্রাচীন নিদর্শনটি আবিস্কৃত হয়।
আজ মঙ্গলবার নাটেশ্বরে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
“নাটেশ্বরে আবিস্কৃত বৌদ্ধ স্তূপটি দেশের বৃহত্তম। এটি ভারতবর্ষের সাঁচি, ভারহুত ও অমরাবতী বৌদ্ধ স্তূপের সমগোত্রীয়।”
এদিন সকালে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ আবিস্কৃত প্রত্ননিদর্শন পরিদর্শন করেন। সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, নাটেশ্বরে আবিস্কৃত হাজার বছরের প্রাচীন সভ্যতার এ প্রত্নতাত্বিক স্থাপনা ও বৌদ্ধ ধর্মের সমাধিকে বিশ্ব ঐতিহ্য তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবছরই খনন কাজে নতুন নতুন স্থাপনা আবিস্কৃত হওয়ার বিষয়গুলোও তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
এটি ভারতবর্ষের সাঁচি, ভারহুত ও অমরাবতী বৌদ্ধ স্তূপের সমগোত্রীয়
এই প্রত্নতাত্বিক খনন ও গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বৌদ্ধ স্তূপ হলো বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের সমাধি ও ধর্ম চর্চা কেন্দ্র। নাটেশ্বরে আবিস্কৃত বৌদ্ধ স্তূপটি দেশের বৃহত্তম। এটি ভারতবর্ষের সাঁচি, ভারহুত ও অমরাবতী বৌদ্ধ স্তূপের সমগোত্রীয়।
তিনি বলেন, নাটেশ্বরে আবিস্কৃত বৌদ্ধ স্তূপের পূর্ব-পশ্চিমে লম্বা উত্তর বাহুটির ৪৩ দশমিক ৫ মিটার পাওয়া গেছে। এর উচ্চতা ৪৩ মিটার। সেখানে চারটি স্তূপ হলঘর, বিশাল আকারের ক্রশাকৃতির কেন্দ্রীয় স্তূপ, বিভিন্ন কক্ষ সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশ পথসহ আরও কিছু নিদর্শন শনাক্ত করা হয়েছে।
অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, বৌদ্ধ স্তূপটি মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এ আবিস্কারের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে বিক্রমপুর বিশ্ব ঐতিহ্যে জায়গা করে নেবে।
তিনি জানান, অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে প্রত্ন-খননের মাধ্যমে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত পাঁচ হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা উন্মোচিত হয়েছে। ২০১৮-১৯ সালের খননে নাটেশ্বরে বৌদ্ধ স্তূপ আবিস্কৃত হলো।
এর আগে সদর উপজেলায় প্রাচীন বসতি, ৬টি বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষ, একটি মণ্ডপ ও পঞ্চস্তূপ আবিষ্কৃত হয়। ২০১৩ সাল থেকে নাটেশ্বর দেউলে বৌদ্ধ মন্দির, আটকোণা স্তূপ, ইটের রাস্তা ও নালা আবিস্কৃত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহম্মেদ, টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার, উপজেলা চেয়ারম্যান জগলুল হালদার ভুতু প্রমুখ।