শখের বারান্দা সাজাবেন যেভাবে

ডেস্ক রিপোর্ট

বারান্দা

১. বিভিন্ন ধরনের গাছ

শখের বারান্দা সাজানো অনেক সহজ হয়ে গেছে কিন্তু! নার্সারিগুলোতে আজকাল মোটামোটি সব ধরনের চারাই পাওয়া যায়। সাথে তারা বিভিন্ন সাইজের ছোটবড় টবও বিক্রি করে। বারান্দার সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সবার আগে মাথায় আসে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ। বেলি ,জবা, হাসনাহেনা, গোলাপ, রঙ্গন, অ্যাডেনিয়াম (মরু গোলাপ), কাঁটামুকুট, অপরাজিতা, মর্নিংগ্লোরি, পরতুলিকা, রেইনলিলি থেকে শুরু করে শাপলা, পদ্ম, স্বর্ণকুমুদ, লেটুসপানা… সবকিছু দিয়েই আপনি আপনার ছোট্ট বারান্দাটিকে সাজিয়ে তুলতে পারবেন।

বিভিন্ন ধরনের গাছ দিয়ে শখের বারান্দা সাজানো - shajgoj.com

পর্যাপ্ত রোদ, আলো, বাতাস পেলে ফুলের এই গাছগুলো আপনার পুরো বাসাটির শোভা বাড়িয়ে তুলবে হাজারগুণ। তবে অনেকক্ষেত্রে দেখা যায় পর্যাপ্ত পরিচর্যার পরও ফুল ঠিকমত আসে না অথবা গাছের পাতা হলুদ হয়ে ঝরে পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে নার্সারিগুলোই বিভিন্ন ধরনের সার বিক্রি করে থাকে। যথাযত সার প্রয়োগের মাধ্যমে খুব সহজেই এর সমাধানও সম্ভব।

বিভিন্ন ধরনের গাছ দিয়ে সাজানো বারান্দা  - shajgoj.com

বিভিন্ন বর্ণ যেমন- নীল, সাদা, বেগুনি রঙের ডাবল অথবা সিঙ্গেল পাপড়ির অপরাজিতা, বিভিন্ন বর্ণের মর্নিংগ্লোরির শাখা-প্রশাখা বারান্দার গ্রিল বেয়ে বড় হয়, তখন সৌন্দর্য যেন আরও বেড়ে যায়। আর বেলি, জবা, রেইনলিলি, পরতুলিকা- এ ধরনের গাছগুলো সিজন শেষে ছেটে দিলে তাদের থেকে ফুল পাওয়া যায় আগের তুলনায় আরও বেশি।

২. জলজ বাগান

আর যদি শখের বারান্দা সাজানো অনন্য করতে চিন্তা করেন জলজ বাগানে, সেটাও সম্ভব। বড় সাইজের কোন গামলায় পানি ভরে তাতে একটা টব বসিয়ে খুব সহজেই বানিয়ে ফেলতে পারেন জলজ বাগান। টবের ভিতর শাপলা, পদ্ম, স্বর্ণকুমুদ, মেক্সিকান সোরড লিলি, জলগোলাপের মত জলজ গাছগুলো লাগাতে পারলে যেন বারান্দার সেই ছোট্ট আপন অরণ্যটা সম্পূর্ণ হয়। আর বারান্দায় জলজ বাগান তৈরি করলে হলে অবশ্যই গামলার পানিতে গাপ্পি মাছ, মলি মাছ ছাড়তে হবে কারণ গাপ্পি মশার ডিম খায়। আর এ ধরনের জলজ বাগান মশার ডিম পারার জন্য উপযুক্ত স্থান।

শখের বারান্দা সাজাতে জলজ বাগান - shajgoj.com

মন যদি চায় তাহলে এই জলজ বাগানের সৌন্দর্য আরেকটু বাড়ানো যায় ছোট্ট একটা ফোয়ারার ব্যবস্থা করে দিলে। বাজারে বিশেষ করে অ্যাকুয়ারিয়াম-এর দোকানগুলোতে মোটর পাওয়া যায়। সেই মোটরটিকে বড় গামলার ভিতরে রেখে সাথে একটা লম্বা টিউব লাগিয়ে টিউবের অপর প্রান্ত মাটির হাড়ি, প্লাস্টিকের পুরনো বোতল অথবা বাঁশ ফুটো করে আটকিয়ে বিভিন্নভাবে ডিজাইন করে খুব সহজেই জলজ বাগানের মাছগুলোর জন্য বানিয়ে ফেলা যায় ছোট্ট একটি জলপ্রপাত।

ছোট্ট একটি জলপ্রপাত দিয়ে শখের বারান্দা সাজানো - shajgoj.com

সব শেষে পানির উপর বিভিন্ন ধরনের পানাও চাইলে দিতে পারেন। পানাগুলো পরিচিত ফ্লোটিং লোটাস নামে। পানা পানির তাপমাত্রা ধরে রাখে। পানিকে অতিরিক্ত গরম হতে দেয় না। এতে মাছের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

৩. কন্টক বা ক্যাকটাস গাছ

কন্টক বা ক্যাকটাস গাছ দিয়ে শখের বারান্দা সাজান - shajgoj.com

আপনি হয়ত ভাবছেন সারাদিন তো ঘরের বাইরে থাকা হয় অথবা বিভিন্ন ঘরের কর্ম-ব্যস্ততায় কেটে যায়, গাছগাছালির যত্ন নেয়ার সময়টা কোথায়! সেক্ষেত্রে আপনি লাগাতে পারেন বিভিন্ন ধরনের ক্যাকটাস বা  সাকুলেন্ট (Succulent plant )। খুব একটা পানি দিতে হয় না। মরু গাছ  কিনা তাই মাটি যখন একেবারেই শুকিয়ে যাবে তখন পানি স্প্রে করে দিলেই হবে। খেয়াল রাখতে হবে অতিরিক্ত পানি যাতে না জমে। পানি গোড়ায় জমে গেলে এ ধরনের গাছ পচে যায়। আর সারাদিন মোটামোটি ৫-৬ ঘণ্টা রোদ পায় এমন জায়গায় রেখে দিলে আপনি নিশ্চিন্ত মনে টানা কয়েকদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন।

৪. রোদবিহীন বারান্দা সাজুক পাতাবাহারে

পাতাবাহারে শখের বারান্দা সাজানো হয়েছে - shajgoj.com

আপনার ঘরে বারান্দা আছে অথচ রোদ আসে না? সেক্ষেত্রেও উপায় আছে। লাগিয়ে দিন কয়েক প্রজাতির পাতাবাহার। রোদ যেহেতু আসে না তাই বিভিন্ন ধরনের অর্কিড ছাড়া হয়ত অন্য ফুল পাবেন না, কিন্তু বিনিময়ে পাবেন সবুজের ছোঁয়া, এই বা কম কী বলুন? লাগাতে পারেন মানিপ্ল্যান্ট, কয়েনপ্ল্যান্ট, লাকিব্যাম্বু, পামগাছ, ইঞ্চিপ্ল্যান্ট, স্পাইডারপ্ল্যান্ট- এর মত কয়েক ধরনের গাছ। কয়েনপ্ল্যান্ট আর স্পাইডারপ্ল্যান্ট যদি সম্ভব হয় তবে সপ্তাহে ১-২ দিন রোদের একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারলে ভালো।

৫. বক্স বারান্দা ও ছাদ হোক ছোট্ট বাগান

শখের বক্স বারান্দায় ছোট্ট বাগান - shajgoj.com

একটি ফ্ল্যাটের সাথে সাথে যদি আস্ত একটি বহুতলবিশিষ্ট বাড়ির মালিক হয়ে থাকেন তাহলে তো কোন কথাই নেই। বানিয়ে দিন বক্স বারান্দা বা পুরো ছাদটিকে একটি বাগানে! শুধু ফুল কেন, ফল থেকে শুরু করে শাকসবজি সবকিছুই লাগাতে পারবেন। আম, কাঠাল, ডালিম, কামরাঙ্গা, লেবু, আমড়ার মত গাছ লাগানোর জন্য বিভিন্ন সাইজের ড্রাম পাওয়া যায় আজকাল। আর এ ধরনের জায়গাতে বড় পরিসরে জলজ বাগানের ব্যবস্থাও করা যায়। আর পুরো বিল্ডিং-এর শোভা বাড়ানোর জন্য বাগানবিলাস, মাধবিলতার যেন জুরি নেই। এক্ষেত্রে শুরুর দিকে হয়ত পুরো বিল্ডিং-এ অরন্যের ছাপ আসবে না, কিন্তু একটু ধৈর্য ধরে ৬-৭ বছর বা তারও কম সময় অপেক্ষা করুন, দেখতে পাবেন তখন আপনার এই অরন্যে ফুলের সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের পাখি, মৌমাছি আর প্রজাপতির মেলা।

৬. বাংলোর ক্ষেত্রে

বাংলোর সাজাতে ছোট্ট বাগান - shajgoj.com

আর আপনার বাড়িটা যদি বাংলো হয়ে থাকে তবে মেইন গেট থেকে বাড়ির মেইন দরজা পর্যন্ত রাস্তার উপর মাচা বানিয়ে সেখানে কুঞ্জলতা অথবা বাসরলতা লাগাতে পারেন। লতানো গাছ কিনা তাই কিছুদিন পর ছায়া তো পাবেনই সাথে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে আপনার ঘরের প্রবেশদ্বার।

তবে আর দেরি কেন, আজই চলে যান আপনার বাড়ির আশাপাশের কোন এক নার্সারিতে। আর শুরু করে দিন আপনার নিজস্ব অরণ্য তৈরি, শখের বারান্দা সাজানো হোক মনমত… যা কেবল আপনারই একান্ত!

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে