নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা: অধ্যক্ষসহ তিনজন রিমান্ডে

ডেস্ক রিপোর্ট

দগ্ধ নুসরাত জাহান
দগ্ধ নুসরাত জাহান। ছবি : সংগৃহিত

‘মামলার তদন্তের শুরু থেকে বাদীপক্ষ ওসির কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন। তাই মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে এই ওসি অন্তরায় হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলাসহ তিনজনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক সরাফ উদ্দিন আহম্মেদ এ আদেশ দেন।

কোর্ট ইন্সপেক্টর গোলাম জিলানী জানান, মাদরাসাছাত্রীর গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনায় আটক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলার ৭ দিন, একই মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিন ও সহপাঠী আরিফুল ইসলামের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন করেন আদালত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ওসি (তদন্ত) কামাল হোসেন তাদের প্রত্যেকের ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করলে আদালত পৃথকভাবে এ আদেশ দেন।

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া) মো. সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নতুন করে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

এর আগে মঙ্গলবার একই আদালতে নুর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন ও শাহিদুল ইসলামের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে আটক অধ্যক্ষের শ্যালিকার মেয়ে উম্মে সুলতানা পপি ও মামলার এজহার নামীয় আসামি যোবায়ের হোসেনকে আদালতে তোলা হয়েছে। তাদেরও ৭দিন করে রিমান্ড আবেদন করেছেন বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কামাল হোসেন।

সোনাগাজীর ওসি প্রত্যাহার, তদন্তে পিবিআই : ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় নুসরাতের পরিবারকে সহযোগিতা না করার অভিযোগে সোনাগাজীর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

আজ বুধবার সকালে তাকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

পুলিশ হেড কোয়ার্টার্সের সহকারী মহা-পরিদর্শক (এআইজি- মিডিয়া) মো. সোহেল রানা গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, নতুন করে মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)।

পুলিশের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘মামলার তদন্তের শুরু থেকে বাদীপক্ষ ওসির কাছ থেকে পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা পাচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছিলেন। তাই মামলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে এই ওসি অন্তরায় হতে পারে এমন আশঙ্কায় তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার জানান, পুলিশ হেড কোয়ার্টার থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠির মাধ্যমে সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে প্রত্যাহার ও মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আজ বুধবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে পিবিআইয়ের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামানের কাছে সকল নথিপত্র হস্তান্তর করা হয়েছে। সোনাগাজী থানায় নতুন করে কাউকে এখনও দায়িত্ব দেয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মাদরাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলায় পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে মামলার প্রধান আসামিসহ ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। এজাহারনামীয় বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। গত ৬ এপ্রিল (শনিবার) সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে- এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।

দগ্ধ নুসরাত জাহান রাফি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে