বিদেশি চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন প্রচার করে আইন লঙ্ঘন করলে, লাইসেন্স বাতিল হবে। একই সঙ্গে বিদেশি মডেল দিয়ে বিজ্ঞাপন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিধি নিষেধ আনা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
বুধবার সচিবালয়ে বেসরকারি টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের (অ্যাটকো) নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
ডাউন লিংক করে দেখানো বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন বন্ধের বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হলে আইন মানতেই হবে।
অ্যাটকোর দাবি ছিল, বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচার এখন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়নি। বিদেশি চ্যানেলগুলোকে ক্লিন ফিড নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে তারা কেবল অপারেটর ব্যবস্থা ডিজিটাল করার জন্য পদক্ষেপ নিতে আবেদন জানান।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দু’টি প্রতিষ্ঠান ডাউনলিঙ্ক করে বিদেশি চ্যানেল দেখায়। তারাই নিয়ম লঙ্ঘন করে দেশি বিজ্ঞাপন বিদেশে চ্যানেলে প্রচার করছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ১৫ দিন সময় নিয়েছে। আমরা সময় দিয়েছি। এর পরও তারা নিয়ম না মানলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে।
তিনি বলেন, টেলিভিশন শিল্পকে বাঁচাতে হবে দেশের স্বার্থেই। আইন অনুযায়ী কোনো বিজ্ঞাপনই ডাউনলিংক প্রোগ্রামে দেখাতে পারে না, যা হচ্ছে তা বেআইনি। আইন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। স্বার্থান্বেষী মহল এ নিয়ে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এ আইন না মানলে লাইসেন্স বাতিল ও দুই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি, বন্ধ করতে চায় না, শুধু বিজ্ঞাপন প্রচারের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আইন কার্যকর করবে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ক্যাবল নেটওয়ার্ক মালিকদের সম্পর্কে তথ্যমন্ত্রী জানান, সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করতে হলে আইন মানতে হবে। যদি কেউ যৌক্তিক সময় চায়, তবে কিছুটা দেয়া যেতে পারে।
বৈঠকে বর্তমানে টেলিভিশনগুলোর অবস্থা ও নিজেদের দাবি তুলে ধরেন অ্যাটকোর নেতারা।
আইন বাস্তবায়ন করার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে তাকে স্বাগত জানিয়ে চ্যানেল ২৪-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ. কে. আজাদ বলেন, বিজ্ঞাপন বাইরে চলে যাওয়াতে শুধু টিভিই না; পত্রিকার অবস্থাও খারাপ। আসছে ঈদে অনেক টিভি মালিক বেতন দিতে পারবেন কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিজ্ঞাপন সংকটে অনেক টিভির আয় কমে গেছে। অনেক টিভি সাংবাদিক-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারে না, চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। আসছে উৎসবে সকল সাংবাদিক-কর্মচারীর যেন বেতন পরিশোধ করা যায় সে উদ্যোগ নিতে সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।
তিনি বলেন, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব চ্যানেলকে ডিজিটালাইজেশনে আসতে হবে। যার মধ্য দিয়ে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ভ্যাট পাবে সরকার।
বিদেশি চ্যানেল থেকে বিজ্ঞাপন ফিরে এলে দেশের টেলিভিশনগুলো ঘুরে দাঁড়াতে পারবে বলে জানান ডিবিসি চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরী।
টিভিগুলোকে ডিজিটাইলেজশন করতে এক বছরের সময় বেঁধে দেয়ার আহ্বান জানান অ্যাটকোর নতুন সভাপতি মাছরাঙা টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।
এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক বাবু ও আরটিভির চেয়ারম্যান মোরশেদ আলম। বৈঠকে আরও কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের মালিক উপস্থিত ছিলেন।