নুসরাত জাহান রাফি হত্যাচেষ্টা মামলার প্রধান আসামি নিপীড়ক অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে মামলা পরিচালনা করায় ফেনীর কাজীরবাগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কাজী বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বিকম।
তিনি বৃহস্পতিবার সকালে বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশে বুলবুলকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আবদুর রহমান বলেন, সিরাজউদ্দৌলাসহ অন্য আসামিদের আইন সহায়তা দেয়ায় তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এদিকে কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্তের আগেই বুধবার বুলবুলকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় উপজেলা আওয়ামী লীগ। ফেনী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট নূর হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বুধবার উপজেলা কমিটি বসে অ্যাডভোকেট বুলবুল সোহাগকে দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি তাকে (বুলবুলকে) জানিয়ে দেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুসারে, দলের যেকোনো নেতাকে বহিষ্কারের এখতিয়ার রাখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ। শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কাউকে সাময়িক বহিষ্কারের সুপারিশ করার ক্ষমতা তৃণমূলের আছে। এ ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কেন্দ্রীয় কমিটিরই। কেন্দ্র বুলবুলকে বহিষ্কারের চিঠি দেয়ায় সেটি কার্যকর হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
১০৮ ঘণ্টা আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় মারা যান ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি। বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের চিকিৎসক অধ্যাপক রায়হানা আউয়াল জানান, মৃত্যুর আগে তিনি লাইফসাপোর্টে ছিলেন।
৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। মাদ্রাসাছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়।
অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এই মামলায় আসামিদের আইনি সহায়তা দেন বুলবুল।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানি করেন অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা। এ ঘটনায় নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই দিনই অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। সে ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে আছেন।