বাংকের অনিয়ম, অস্থিতিশীলতা, ঋণ প্রদান ও আদায় নিয়ে গাফিলতির কথা দেশবাসীর অল্পবিস্তর জানা আছে। এবার খোদ বাণিজ্যমন্ত্রীই বলে দিয়েছেন, দেশের ব্যাংকগুলো ডাকাতি করছে। ১১ এপ্রিল কনজিউমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে(ক্যাব)আয়োজিত ‘ভোক্তা অধিকার শক্তিশালীকরণ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি বলেন, যে টাকা ব্যাংক সুদ নেয় এবং যে টাকা সুদ দেয় তার ডিফারেন্সটা পৃথিবীর কোনো দেশে ২ থেকে ৩ শতাংশের বেশি নয়। বাংলাদেশই পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেখানে এই তারতম্য ৫ শতাংশের বেশি।
আলবৎ তাই। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে ব্যাংকগুলো একরকম অসহায় হয়ে পড়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ২ তেকে ৩ শতাংশ তারতম্য থাকার পরও সেসব দেশে বাংলাদেশের তুলনায় ব্যাংকগুলো অর্থবছর শেষে বেশি মুনাফা চোখে দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাংগুলোর ভাগ্যে তা জুটছে না। এর অন্যতম কারণ ব্যাংক ঋণ আদায় না করতে পারা এবং ব্যাংকের দেওয়া ঋণ অব্যবসায়ী, অপেশাদার লোকের হাতে চলে যাওয়া। এক্ষেত্রে অবশ্য ব্যাংকগুলোর নিজস্ব প্রশাসনিক দুর্বলতাও কম দায়ি নয়। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এক ধরনের চক্র হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়ে যাচ্ছে। এ প্রবণতা কোনোক্রমেই থামানো যাচ্ছে না। এই অর্থ গ্রহিতারা সময় মত রিশিডিউল করছেন না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণেও নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। ফলে যে ব্যাংকের প্রতিবছর ঋণ প্রদানের সক্ষমতা বাড়ার কথা, সেই ব্যাংকেই কলমানি অর্থ গ্রহণ করতে হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ নজর দেওয়ার প্রয়োজন আছে। সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ঋণ আদায়ে সময় বেধে দেওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ঋণ আদায় প্রক্রিয়ায় সরকারের সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তথা সরকারের মনে রাখতে হবে, এই ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায় না হলে সরকারের অর্থনৈতিক সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে না। শুধু তাই নয়, ব্যাংকগুলো এক বা একাধিক ব্যাক্তিকে দেওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে আনতে পারলে তা ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের সহায়ক পুঁজি হিসাবে ব্যবহৃত হতে পারে। এই ঋণের টাকা আদায় করতে পারলে ব্যাংক সুদের হারও কমানোর জন্য চাপ দেওয়া যাবে। এবং সেটাই হবে যৌক্তিক। এরমধ্যে খবরে জানা গেছে, বেশ কয়েকটি ব্যাংক কিছু ঋণকে তামাদি বলে তা আদায়ে আর পদক্ষেপ নেবে না। এটি হবে চরম একটি ভুল সিদ্ধান্ত। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকের অর্থ ফেরত না দেওয়াই কেবল উৎসাহিত হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না।