চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলায় মসজিদে ঢুকে ইমামকে পিটিয়েছে তিন বোন। বুধবার (১০ এপ্রিল) উপজেলার ১৬নং রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের সাহেবগঞ্জ গ্রামের পুটির বাজার এলাকার একটি মসজিদে ফজরের নামাজ শেষে মোনাজাতের সময় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনা নিয়ে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। ওই তরুণীদের বাবার দাবি, তার এক মেয়েকে ইমাম উত্ত্যক্ত করতেন। এজন্য তার তিন মেয়ে তাকে পিটিয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, তিন বোনের একজনের সঙ্গে ইমামের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু তিনি বিয়ে করতে রাজি না হওয়ায় তিন বোন ইমামকে পিটিয়ে আহত করেছে। আর পুলিশ বলছে, মসজিদ কমিটি নিয়ে গ্রুপিংয়ের কারণেও এ ঘটনা ঘটতে পারে।
ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রকিব বলেন, ‘প্রেম করার পর বিয়েতে রাজি না হওয়ায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে পুলিশ জানতে পেরেছে।’
তরুণীদের বাবার অভিযোগ, ইমাম অনেক দিন ধরে এলাকার কিছু বখাটে ছেলেদের নিয়ে তার এক মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। এ নিয়ে তিনি মসজিদ কমিটির সভাপতির কাছে নালিশও করেন। কিন্তু কোনও ফল পাননি। তার মেয়েরা উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে যান। সেসময় তার মেয়েদের ইমাম মারধর করেন। বর্তমানে তার এক মেয়ে হাসপাতালে ভর্তি।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার ভোরে ফজরের নামাজের পর মোনাজাত চলছিল। এসময় বোরকা পরা তিন বোন মসজিদে ঢুকে ইমামের চোখেমুখে মরিচের গুঁড়া ছিটিয়ে দেন। পরে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করেন। একপর্যায়ে মুসল্লিরা তাদের ধরে ফেলেন। পরে মসজিদ কমিটির লোকজনকে খবর দেওয়া হয়। তারা এসে তরুণীদের ছেড়ে দেন। ওই ইমামকে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মসজিদ কমিটির সভাপতি বলেন, ওই ইমাম এক মেয়েকে বহুদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছেন বলে তার বাবা অভিযোগ করেছেন। এর ভিত্তিতে তিনি ইমামকে মসজিদ ছেড়ে চলে যেতে বলেন। ইমাম চলেও যান। কিছুদিন পর মসজিদের কিছু লোক তাকে আবার নিয়ে আসেন।
রূপসা দক্ষিণ ইউপি চেয়ারম্যান ইসকান্দার আলী বলেন, ‘মেয়েপক্ষ থেকে আমরা জেনেছি, ইমামের সঙ্গে তিন বোনের একজনের প্রেমের সম্পর্ক আছে। মেয়ে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে। কিন্তু ইমাম রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বোরকা পরে মসজিদে ঢুকে প্রথমে মরিচের গুঁড়া দেয়। পরে পাইপ দিয়ে আঘাত করে। এসময় উপস্থিত মুসল্লিরা দু’বোনকে ধরে ফেলে, আরেকজন চলে যায়।’
তিনি বলেন, ‘মেয়ের বাবা ওই মসজিদের সহসভাপতি। এলাকার পরিস্থিতি শান্ত হলে আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো। সমাধানের চেষ্টা করবো।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য চেষ্টা করেও ওই ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রকিব বলেন, ‘আমরা প্রাথমিকভাবে জেনেছি- ওই ইমামের বাড়ি হাইমচর। ইমাম ওই মেয়ের ভাইকে পড়ানোর সূত্র ধরে প্রেমের সম্পর্ক হড়ে ওঠে। এরপর মেয়েপক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাবও আসে। কিন্তু বিয়েতে ইমাম রাজি হচ্ছিলেন না। এ নিয়ে ঘটনার দু’দিন আগে স্থানীয়ভাবে বসারও কথা ছিল। বিষয়টি শুনে পুলিশ পাঠানো হয়।’
তিনি বলেন, হুজুরও মেয়েকে মারধর করেছেন। তারা দু’জনই আহত হয়েছেন। এছাড়া মসজিদ কমিটি নিয়েও গ্রুপিং আছে। সে কারণে ঘটনাটিকে ভিন্ন রূপ দেওয়ার চেষ্টাও কেউ কেউ করছেন। এ ঘটনায় কেউ থানায় এলে মামলা নেবো।