জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড : ১০০ বছরেও ক্ষমা চায়নি ব্রিটেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড
জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড। ফাইল ছবি

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের একশ বছর পার রহলো গতকাল শনিবার। এখন থেকে শতবর্ষ আগে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উন্মুক্ত গুলি চালায় ব্রিটিশ সেনারা। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটেনের ঘৃণ্য ঔপনিবেশিক শাসনের নিকৃষ্ট ও জঘন্যতম ঘটনা এ হত্যাকাণ্ড।

বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের জন্য ব্রিটিশ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে উপমহাদেশ। ১০০ বছর পরও ক্ষমা চাইল না ক্ষয়িষ্ণু ব্রিটেন। বুধবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে দুঃখপ্রকাশ করেন। তবে ক্ষমা চাননি।

পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে ওই হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষে তেরেসা মে বলেন, আমরা গভীরভাবে দুঃখপ্রকাশ করছি সেদিনের ঘটনার জন্য।

জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ড ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কুখ্যাত গণহত্যা। অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের অমৃতসর শহরে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন ইংরেজ সেনানায়ক ব্রিগেডিয়ার রেগিনাল্ড এডওয়ার্ড হ্যারি ডায়ার। শহরে কোনো ধরনের জনসভা নিষিদ্ধ করেন তিনি।

নিষেধাজ্ঞা উড়িয়ে দিয়ে ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগের উঁচু দেয়ালঘেরা চত্বরে জড়ো হয় প্রায় ১০ হাজার বিক্ষোভকারী। কয়েক ডজন সেনা নিয়ে সভাস্থলে পৌঁছান অমৃতসরের কসাই খ্যাত ডায়ার এবং একমাত্র প্রবেশপথ আটকে দেন। বিক্ষোভকারীদের কোনোরূপ সতর্ক না করেই সমাবেশের ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দেন। ব্রাশফায়ারে ঝাঁজরা হয়ে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়ে ৩৭৯টি তাজা প্রাণ। গুরুতর জখম হয় আরও ১ হাজার।

হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ইংরেজ সরকারের দেয়া ‘নাইটহুড’ উপাধি ত্যাগ করেছিলেন। পার্লামেন্টের ওয়েস্টমিনস্টার হলে বিষয়টি নিয়ে হাউস অব কমন্সে বিতর্ক ছিল। নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার প্রস্তাব আনেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টিরই এক এমপি। কিন্তু ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্যাসিফিকবিষয়ক ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী মার্ক ফিল্ড বলেন, ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে আর্থিক দায়বদ্ধতা জড়িত রয়েছে।

অনেকের মতে, ব্রিটিশ পাঠ্যসূচিতে পাঞ্জাবের ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অন্তর্ভুক্তি, হতাহতদের উত্তরাধিকারীদের জন্য ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দাবি আজকের বিতর্কে ওঠে। অনেকের মতে, সেই কারণেই মন্ত্রী আর্থিক প্রসঙ্গ টেনেছেন।

তিনি বলেন, আমি একটু গোঁড়ামনস্ক। ঔপনিবেশিক ইতিহাসের জন্য ক্ষমা চাইতে আমারও একটু অনীহা। তাছাড়া সরকারি দফতরের ক্ষমা চাওয়ার সঙ্গে আর্থিক দায়বদ্ধতা চাপতে পারে বলেও একটা চিন্তা রয়েছে।

তবে এ ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। এর আগে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন ২০১৩ সালে জালিয়ানওয়ালা বাগ পরিদর্শনের সময় ওই ঘটনার জন্য ক্ষমা চাননি।

হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ উপলক্ষে এদিনও জালিয়ানওয়ালাবাগে শহীদদের সমাধিতে ফুল দেন ভারতের ব্রিটিশ হাইকমিশনার ডমিনিক আসকুইথ।

ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনি নতুন করে ইতিহাস লিখতে চাইতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এটা সম্ভব না। আপনি যে করতে পারেন, সেটা হচ্ছে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়া।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে