দেশে ৭ লাখ তাঁতি হারিয়ে গেছে ২৮ বছরে

বিশেষ প্রতিনিধি

৭ লাখ তাঁতি হারিয়ে গেছে
নানা সমস্যায় দিন দিন তাঁত শিল্প কমছে। ফাইল ছবি


“তাঁত পেশায় আয় কম, হস্তশিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, তাঁত শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের অভাব, বাজারজাতকরণের সমস্যা ইত্যাদি কারণে তাঁত শিল্প দিন দিন কমছে।”

২৮ বছরের ব্যবধানে দেশে তাঁতির সংখ্যা কমেছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ জন। ১৫ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন তাঁতি।

একই সময়ে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা কমেছে ৯৬ হাজার ৪১৫টি। ১৫ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৬৭ হাজার ৫০৬টি তাঁত ইউনিট।

universel cardiac hospital

‘তাঁত শুমারি ২০১৮’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) এই প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

তাঁত পেশায় আয় কম, হস্তশিল্প থেকে যান্ত্রিক শিল্পের পরিবর্তন, পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব, তাঁত শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকের অভাব, বাজারজাতকরণের সমস্যা ইত্যাদি কারণে তাঁত শিল্প দিন দিন কমছে বলে প্রতিবেদেন উল্লেখ করা হয়।

জানা যায়, ১৯৯০ সালে প্রথম তাঁত শুমারি হয়। এরপর হয় ২০০৩ সালে। তৃতীয়বারের মতো তাঁত শুমারি হয় ২০১৮ সালে।

২০১৮ সালের তাঁত শুমারির তুলনামূলক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৯০ সালে ১০ লাখ ২৭ হাজার ৪০৭ জন তাঁতি ছিল। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭১ হাজার ৭৬৫ জন (৫৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ) আর নারী ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬৪২ জন, অর্থাৎ ৪৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ।

২০০৩ সালে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ১১৫ জন তাঁতি ছিলেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৭ জন, যা ৫৩ দশমিক ১৯ শতাংশ এবং নারীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৮ জন, যা ৪৬ দশমিক ৮১ শতাংশ।

২০১৮ সালের প্রতিবেদন বলা হয়েছিল, ৩ লাখ ১ হাজার ৭৫৭ জন তাঁতি রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ১ লাখ ৩৩ হাজার ৪৪৪ জন, যা পরিমাণ ৪৪ দশমিক ২২ শতাংশ এবং নারীর সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৩১৩ জন, যার পরিমাণ ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

অর্থাৎ ১৯৯০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ২৮ বছরের ব্যবধানে দেশে তাঁতির সংখ্যা কমেছে ৭ লাখ ২৫ হাজার ৬৫০ জন। ১৫ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন তাঁতি।


নারী তাঁতির সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি

১৯৯০ ও ২০০৩ সালের তাঁত শুমারিতে পুরুষ তাঁতির সংখ্যা বেশি থাকলেও ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নারী তাঁতির সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। অন্যদিকে ১৯৯০ সালে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ও খানা ভিত্তিক তাঁত ইউনিট ছিল ২ লাখ ১২ হাজার ৪১২টি।

২০০৩ সালে তাঁত ইউনিট কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২টি। এর মধ্যে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ইউনিট ১২ হাজার ৮১৯টি এবং খানাভিত্তিক ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৯৩টি। ২০১৮ সালে আরও কমে মোট তাঁত ইউনিট কমে দাঁড়ায় ১ লাখ ১৬ হাজার ৬টি। এর মধ্যে কারখানা/ শিল্প প্রতিষ্ঠান ৫৮১টি এবং খানাভিত্তিক ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫টি।

অর্থাৎ ২৮ বছরের ব্যবধানে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা কমেছে ৯৬ হাজার ৪১৫টি। ১৫ বছরের ব্যবধানে কমেছে ৬৭ হাজার ৫০৬টি তাঁত ইউনিট।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ‘তাঁত শুমারি ২০১৭’ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জুলাইয়ে শুরু হয় এবং শেষ হবে চলতি বছরের জুনে। সরকারি অর্থায়নে এই প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ছিল ৭৬৬ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।

প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে এ সময় প্রকল্প পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিভাগে তাঁত শিল্পের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই দুই বিভাগে দেশের মোট তাঁত ইউনিটের মধ্যে ৭৩ দশমিক ১০ শতাংশ। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বিভাগে এই হার ৫৬ দশমিক ২০ শতাংশ। সেই সঙ্গে শহর অঞ্চলের তুলনায় গ্রামে তাঁত ইউনিটের সংখ্যা অনেক বেশি। শহরে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং পল্লী এলাকায় ৮৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিবিএস মহাপরিচালক ড. কৃষ্ণা গায়েন বলেন, তাঁত শুমারির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে এই খাতের বর্তমান অবস্থার মূল্যায়ন করা, কার্যকর ও অকার্যকর তাঁতখানা সনাক্ত করা। তাঁতি ও স্বজাতীয় কর্মীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা নির্ধারণ করা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে