তৃতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিন: ফুরফুরে মেজাজে সরকার

ডেস্ক রিপোর্ট

সরকর
টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন শেখ হাসিনা

নির্বাচনকেন্দ্রিক সংলাপের আয়োজন ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য বিশেষ সংযোজন। যদিও বিরোধীপক্ষের অভিযোগ ছিল, ওই সংলাপের সিদ্ধান্ত সরকার একতরফাভাবে গ্রহণ করেছে। কৌশলগত অবস্থান নিয়ে তারা নিজেদের অবস্থানই শক্ত করেছে মাত্র।

যে আশায় বিরোধী শক্তি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তকমা লাগিয়ে মাঠ গরম করতে চাইছিল, সে আশায় গুড়েবালি! বরং ফসল তোলার পরিবর্তে বুমেরাং হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নামে যুগপৎ পথচলায়। তাদের আশার বেলুন চুপসে গেছে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারক, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘দেশের মানুষ শান্তি চায়। দেশবিরোধী রাজনীতি আর হালে পানি পাবে না, তারই প্রমাণ ৩০ ডিসেম্বর। ওই নির্বাচনের পর দেশের অধিকাংশ মানুষ এখন সরকারের প্রতি আস্থা রাখছে। আন্দোলন আর ষড়যন্ত্র করার মতো শক্তি বিরোধী জোটের নেই এবং এটিই সরকারকে স্বস্তি দিয়েছে।’

universel cardiac hospital

এদিকে, শীর্ষ নেতৃত্বের জেল-সাজা আর সিদ্ধান্তহীনতায় অস্তিত্ব সংকটে এখন প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ফিকে হয়ে আসছে খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলনও। ভাঙন স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াত ইসলামীতে। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়েতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর প্রায় বেসামাল দলটি। আত্মগোপনে দলটির ছাত্র সংগঠন শিবিরের নেতাকর্মীরাও।

ঐক্যফ্রন্ট গঠনের মধ্য দিয়ে বিশেষ আলোচনায় আসা গণফোরাম ছেড়ে সংসদে শপথ নিয়েছেন দলটির শীর্ষ দুই নেতা। যা গণফোরামকে বেকায়দায় ফেললেও নির্বাচন, সরকার গঠনের বৈধতায় রসদ জুগিয়েছে।

অপরদিকে, অরাজনৈতিক হলেও সরকারের ‘মাথাব্যথা’ নামক হেফাজতে ইসলাম এখন সরকারের-ই ডেরায়। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতির চরম বিরোধিতা করলেও কওমি শিক্ষানির্ভর হেফাজতে ইসলাম নানা সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এখন সরকারের গুণ-কীর্তনে মাতুয়ারা।

এক কথায় বলতে গেলে, রাজনৈতিক শক্তির বিবেচনায় মহাজোট সরকারের এখন ‘দারুণ সময়’। বিশেষত, গত নির্বাচনের পর এ সরকারের প্রথম ১০০ দিন কেটেছে অনেকটাই ‘মধুচন্দ্রিমা’র আবহে।

অথচ বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এমনটি কখনই দেখা যায়নি। সরকার পরিবর্তন বা একই সরকারের ধারাবাহিকতা থাকলেও নির্বাচনের পরপরই রাজনীতিতে অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে। জ্বালাও-পোড়াও, খুন, ধর্ষণ নির্বাচনী সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল প্রায়। কিন্তু এবার বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সামগ্রিক পরিস্থিতি সরকারের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে ছিল।

বিশেষ করে নির্বাচনের সময় সরকারের নেয়া একপেশে কৌশলই পরবর্তীতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দল ও শরিকরা যে আস্থা রেখেছেন, সেটাও সরকারের অবস্থান শক্ত করেছে। এ কারণেই মনে করা হয়, তৃতীয় দফা সরকার গঠন করে শেখ হাসিনা প্রভাবশালী মন্ত্রীদের বাদ দেয়ার পরেও ‘টু’ শব্দটি হয়নি। এত সংখ্যক বর্ষীয়ান রাজনীতিককে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেয়ার ঘটনা অদ্বিতীয়। যা সরকারের জন্য বিশেষ চ্যালেঞ্জও হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। বরং খবর মিলছে, অনভিজ্ঞ তরুণ মন্ত্রীদের পথ চলায় সহায়তা করছেন বাদপড়ারা।

তবে সরকারের জন্য রাজনীতির আঙিনায় আপাতত স্বস্তির বার্তা থাকলেও, অনিশ্চিতাও কম নয়। সংসদে সত্যিকার বিরোধী শক্তির প্রতিনিধিত্ব না থাকা, জবাবদিহিতা না থাকা, নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য যে সুখকর নয়, তা অনেকেই মনে করছেন। বিশেষত নারী নির্যাতনের বিষয়টি সমাজের সার্বিক চিত্রের প্রতিফলন হয়ে সামনে আসছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

সরকারের সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘নুসরাত হত্যাসহ নারী নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের চরমভাবে বিব্রত করেছে। বিব্রত করেছে সড়কে নিরাপত্তার বিষয়টিও। এটি সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। তাছাড়া সব কিছু সরকারের অনুকূলে আছে বলে আমি মনে করি।’

তবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন, ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের অনীহার বিষয়টিও ভাবিয়ে তুলেছে। ভোট থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিলে গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ভালো খবর নয়। মানুষকে আস্থায় আনা সরকারেরই দায়িত্ব।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আপনি গণতন্ত্র, রাজনীতি আড়াল করে কিছুই টেকসই করতে পারবেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে। জবাবদিহিতা নেই কোথাও। গণতন্ত্র নাজুক থাকলে এমনটিই হয়। সরকারে আপাতত স্বস্তি মিললেও এ পরিস্থিতি টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হতে পারে না। যেকোনো সময় রাজনৈতিক, সামাজিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।’

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে