সাইবার নিরাপত্তার রাজনীতিকীকরণ হলে তা পুরো বিশ্বের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে। গতকাল মঙ্গলবার চীনের শেনজেন শহরে শুরু হওয়া ‘ওয়ার্ল্ড অ্যানালিস্ট সামিট-২০১৯’-এর প্রথম দিনের আলোচনায় এ মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নিরাপত্তার ইস্যুটির সঙ্গে বিশ্ব রাজনীতির নিবিড় যোগসূত্র রয়েছে। এখন সেই রাজনীতি সাইবার নিরাপত্তা ঘিরে শুরু হলে তা বিশ্বজুড়েই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে জটিল নিরাপত্তা সংকট তৈরি করবে।
তারা বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি কীভাবে আরও বেশি জনকল্যাণে কাজে লাগানো যায়, তার জন্য নতুন উদ্ভাবন এবং কারিগরি উন্নয়নের দিকে আরও বেশি নজর দেওয়া উচিত। সাইবার দুনিয়াকে মানুষের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করার দিকে গুরুত্ব দিয়ে এটি রাজনীতির বাইরে রাখা উচিত।
তিন দিনের এ সম্মেলনে বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশের সাত শতাধিক তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, ব্যবসায়ী, গবেষক ও সাংবাদিক অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের আয়োজন করেছে চীনের বিশ্বখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য উৎপাদন ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের ডেপুটি চেয়ারম্যান কেন হু বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা হচ্ছে। এখন তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক যে কোনো উদ্ভাবন এবং পণ্য বাজারজাত করার আগে নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হয়।
তিনি বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টির রাজনীতিকীকরণ করা হলে তা পুরো বিশ্বের সবার জন্যই বড় ঝুঁকির কারণ হবে। এ কারণেই সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি একটি ‘কারিগরি’ ইস্যু হিসেবে বিবেচনা করে এই রাজনীতিকীকরণ না করার আহ্বান জানান কেন হু।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হুয়াওয়ের ইনস্টিটিউট স্ট্র্যাটেজিক মার্কেট রিসার্চ বিভাগের প্রধান উইলিয়াম সু বলেন, বিশ্ব এখন তথ্যপ্রযুক্তির আরও বড় চমকের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ফাইভজি বা পঞ্চম প্রজন্মের তথ্যপ্রযুক্তি সারা দুনিয়ায় অভাবনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসবে। স্মার্ট শহর, স্মার্ট কারখানা থেকে শুরু করে কৃষি উৎপাদন এবং গবাদি পশুর খামার পর্যন্ত ফাইভজি প্রযুক্তিতে স্মার্ট হয়ে যাবে।
তিনি প্রযুক্তির এই নতুন সম্ভাবনাকে শুধু শহর এলাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সবার ভাবা উচিত কীভাবে তথ্যপ্রযুক্তির সুবিধার আওতায় গ্রাম এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে নিয়ে আসা যায়। যেসব দেশ বড় বিনিয়োগের অভাবে তথ্যপ্রযুক্তিতে পিছিয়ে পড়ছে, সেসব দেশে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর আরও বিনিয়োগ বাড়ানো উচিত বলে মত দেন তিনি।
সম্মেলনের প্রথম দিনে তথ্যপ্রযুক্তির চলমান বিষয় নিয়ে ১০টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ‘সাইবার নিরাপত্তা’ এবং ‘ডাটা কমিউনিকেশন’ বিষয়ক সেমিনার দুটি সবার কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
সাইবার নিরাপত্তার সেমিনারে আন্তর্জাতিক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন সাফলক বলেন, সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি এখন শুধু আর কারিগরি বিষয় নেই, এটা রাজনৈতিকও হয়ে গেছে। এই রাজনীতি যেমন প্রচলিত নিরাপত্তার বিষয়টি বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে, তেমনি সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টিও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। এর ফলে সাধারণ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের বিপদের আশঙ্কাই প্রবল হচ্ছে।
তিনি তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়কে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রেখে কীভাবে আরও বেশি জনকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, সে বিষয়টিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টির সঙ্গে ব্যবসায়িক নীতিরও যোগসূত্র আছে। নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় যেমন নিরাপত্তা বিষয়ক পণ্যের বাজার বিস্তৃত হয়েছে, তেমনি সাইবার নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ বেড়ে যাওয়ার কারণে তথ্যপ্রযুক্তির অন্যান্য খাতের চেয়ে নিরাপদ ডিজিটাল কাঠামো তৈরিতে ব্যয় অনেক বেড়েছে। নিরাপত্তা বিষয়ক সফটওয়্যারের বাজারের আকারও দ্রুত প্রসারিত হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় চমক নিয়ে আসছে ‘ওয়াইফাই-৬’ প্রযুক্তি
ডাটা কমিউনিকেশন সেমিনারে জানানো হয়, ফাইভজির মতো তথ্যপ্রযুক্তি দুনিয়ায় বড় চমক নিয়ে আসছে ‘ওয়াইফাই-৬’ প্রযুক্তি। সেমিনারে আন্তর্জাতিক ‘ওয়াইফাই অ্যালাইন্সে’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন রবিনসন বলেন, ওয়াইফাই-৬ এবং ফাইভজি হবে একে অপরের পরিপূরক। ফাইভজি মোবাইল ফোন অপারেটর এবং ব্যবহারকারীদের জন্য বড় সুবিধা নিয়ে আসবে। আর ওয়াইফাই-৬ সব ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারকারীকেই অত্যন্ত নিরাপদ, দ্রুতগতির এবং নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করবে। বিমানবন্দর, বড় অফিস, বড় শিল্প-কারখানা এবং বৃহৎ স্থাপনার ভেতরে তারবিহীন দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবায় ‘ওয়াইফাই-৬’ হবে সবচেয়ে কার্যকর প্রযুক্তি। ওয়াইফাই প্রযুক্তিতে মুক্ত বেতার তরঙ্গ ব্যবহারের সুযোগ থাকার কারণে এর ব্যয়ও অনেক কম হবে বলে জানান তিনি।
সম্মেলনস্থলে তথ্যপ্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন প্রদর্শনী পুরো আয়োজনের অন্যতম বড় আকর্ষণ। এতে বাংলাদেশের ডিজিটাল ক্ষমতায়নের প্রতীক গ্রামাঞ্চলে নারীদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার জন্য নেওয়া প্রকল্প ‘আইসিটি বাস’ও স্থান পায়।