চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে হাই কোর্ট।
পাশাপাশি ওই পদের জন্য নেয়া সাক্ষাৎকার (মৌখিক পরীক্ষা) বাতিল করে আবার পরীক্ষা নিতে চাকরিপ্রত্যাশী মো. এমদাদুল হকের আবেদন দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে উপাচার্যকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ভালো ফলাফলের জন্য প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক পাওয়া এমদাদুল হকের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেয়।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
গত ২৭ মার্চ প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদে নিয়োগের সাক্ষাৎকারে অংশ নিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যান এমদাদুল।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে পৌঁছানোর পর সাতজন শিক্ষার্থী পথ আটকে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের এক কোণে নিয়ে যায় এবং টাকা দাবি করে বলে এমদাদুলের অভিযোগ।
তার আইনজীবী বলেন, টাকা না দেয়ায় ওই মাঠে তাকে এক দফা এবং পরে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার প্যাগোডায় নিয়ে আরেক দফা মারধর করা হয়।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে নিয়ে আবারও মারধর করে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বলা হয়, তিনি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টর ও ভিসিকে জানালেও তারা কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় পুলিশ এমদাদুলকে হাটহাজারী থানায় নিয়ে যায়।
সেদিন বিকালে ওসি এসে পুরা ঘটনা শুনে দুঃখ প্রকাশ করেন। থানার ডিউটি অফিসার তাকে একটি শার্ট এনে দেন যাতে তিনি গায়ের ছেঁড়া কাপড় বদলে নিতে পারেন। থানা থেকে ছাড়া পেয়ে এক বন্ধুর বাসায় চলে যান এমদাদুল।
ওই ঘটনার পর ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন এমদাদুল। সেখানে তাকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু তাতে কোনো সাড়া না পেয়ে হাই কোর্টে এই রিট আবেদনা করা হয় বলে জানান এমদাদুলের আইনজীবী জ্যেতির্ময় বড়ুয়া।
তিনি বলেন, আজকে শুনানি শেষে আদালত আদেশে বলেছে, গত ৩০ মার্চ এমদাদুল হক যে আবেদনটি করেছিলেন ভিসি মহোদয়ের কাছে, সেটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। সেইসঙ্গে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে প্রভাষকের দুটো খালি পদে কোনোভাবেই যেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা না হয়, সে বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ময়মনসিংহের গৌরিপুরের আজিজুল হকের ছেলে এমদাদুল হক ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাণিবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন।
২০১২ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় তিনি ৩.৮৮ সিজিপিএ পেয়ে বিভাগে প্রথম হন। এরপর ২০১২-২০১৩ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্স পরীক্ষায় তার সিজিপিএ হয় ৩.৯৬। ওই ফলাফলের জন্য তাকে প্রধানমন্ত্রীর স্বর্ণপদক দেয়া হয়।
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগ প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর এই রেজাল্ট আর কোনো শিক্ষার্থী করতে পারেনি। এত ভালো রেজাল্ট করার পরও একজন শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ না পায় এটা অত্যন্ত দুঃখজনক হবে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলমান ‘অবক্ষয়ের’ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বলে জানান আইনজীবী জ্যোর্তিময় বড়ুয়া।
তিনি বলেন, আদালত যেহেতু দুই সপ্তাহ সময় বেঁধে দিয়েছে, আমরা দেখবো কী হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে আদালতকে আমরা এর ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করব এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চাইব।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার বলেন, আজকে আদালত এ সংক্রান্ত যে রুল দিয়েছেন তার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।