এবারের হালনাগাদ ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে বিশেষ কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোহিঙ্গাপ্রবণ ৩২ উপজেলাকে চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান করে গঠন করা হয়েছে এই কমিটি। কমিটির সুপারিশ ছাড়া এসব উপজেলায় কাউকে নতুন ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত না করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে ভোটারযোগ্যদের তথ্য সংগ্রহ বিষয়ে ইসির সমন্বয় সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ইসি কার্যালয়ের সচিব মো. হেলালুদ্দীন আহমেদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ইসি সচিব। এ সময় ইসি কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হতে না পারে, সে বিষয়ে ১০ দফা নির্দেশনাসহ কঠোর নজরদারি রাখতে মাঠ পর্যায়ের তথ্য সংগ্রহকারীদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ইসি সচিব। তিনি বলেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও চট্টগ্রামের ৩২ উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের বিশেষ কমিটি রয়েছে।
ইসি সচিব আরও বলেন, রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার হতে না পারে সে জন্যে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসি। এসব এলাকার জন্য রয়েছে ভোটার নিবন্ধনে বিশেষ ফরম।
বিশেষ এলাকায় বিশেষ কমিটির যাচাই
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ উপজেলা হলো কক্সবাজার সদর উপজেলা, চকরিয়া, টেকনাফ, রামু, পেকুয়া, উখিয়া, মহেশখালী ও কুতুবদিয়া। বান্দরবানের সদর, রুমা, থানচি, রোয়াংছড়ি, আলীকদম, লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি। রাঙামাটির সদর, লংগদু, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, বাঘাইছড়ি, জুরাছড়ি ও বরকল এবং চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, রাঙ্গুনিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলা।
ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত সব জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর অলাইনে যাচাই করতে হবে। যাচাইকালে (ক) ভাই/বোনের ডাটাবেজে পিতা/মাতার নামের সাথে আবেদনকারীর ফরম-১ এ উল্লেখিত পিতা/মাতার নামের মিল থাকতে হবে। (খ) চাচা/ফুফুর ডাটাবেজে তাদের পিতার নাম ও ঠিকানার সঙ্গে আবেদনকারীর বিশেষ তথ্য ফরমে প্রদত্ত পিতামহের নাম ও ঠিকানার মিল থাকতে হবে। (গ) প্রয়োজনে নিকট আত্মীয়ের মোবাইল নম্বরে কথা বলে তাদের পরিচিতি/তথ্য সম্পর্কিত বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।
এ ছাড়া উপজেলা বিশেষ কমিটি প্রতিটি ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত দেবে। রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের সপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন বা মিথ্যা/জাল কাগজপত্র সরবরাহ করেন অথবা সংশ্লিষ্ট কারও গাফিলতি ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করতে হবে।
হালনাগাদে উদ্বুদ্ধকরণ, তথ্য সংগ্রহকারীদের তদারকি: ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদকে সামনে রেখে মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক প্রচারণা ও উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি নিতে বলা হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের, মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে, নারী ভোটারদের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে আলাদা আলাদা প্রচারণামূলক কার্যক্রম চালাতে বলা হচ্ছে। তথ্য সংগ্রহকারী যাতে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে, সে বিষয়েও তদারকি করা হবে বলে জানান সচিব।
শুধু একটি জায়গায় বসে যেন তথ্য সংগ্রহ করা না হয়, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য নিতে হবে। তথ্য সংগ্রহকারীদেরও নজরদারিতে রাখা হবে।
হিজড়া পরিচয়ে ভোটার
ইসি সচিব হেলালুদ্দীন জানান, এবার হালনাগাদের সময় হিজড়া পরিচয়ে ভোটার হতে পারবেন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা। ভোটার নিবন্ধন ফরমে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ অপশনে নারী, পুরুষের পাশাপাশি হিজড়া রাখা হয়েছে।
স্মার্ট কার্ড পাবেন
এবার হালনাগাদে যুক্ত হওয়া নতুন ভোটাররা আগামী ৩১ জানুয়ারি তালিকাভুক্ত হবেন। জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহের সময় তাদের হাতে স্মার্ট কার্ড দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন ইসি সচিব। বর্তমানে ১০ কোটি ৪২ লাখের বেশি নাগরিক ভোটার তালিকাভুক্ত রয়েছেন। হালনাগাদে প্রায় ৮০ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ হবে এবার। কম বয়সীরা ১৮ বছর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তালিকাভুক্ত হবেন। হালনাগাদের সময় ১০ আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিশের ছাপও নিয়ে রাখা হবে।