ভারত পেট্রাপোলে আমদানি-রপ্তানির সব পণ্যের পরীক্ষা করবে

অর্থনীতি ডেস্ক

আমদানি-রপ্তানি
ফাইল ছবি

এবার ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আমদানি-রপ্তানির পণ্য চালান শতভাগ পরীক্ষা করে তারপর ছাড়পত্র দেওয়ার নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর করতে বলেছে সে দেশের শুল্ক কর্তৃপক্ষ।

যে কারণে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে যাবে দাবি করে আপত্তি তুলেছেন বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা।

কলকাতার চিফ কাস্টমস কমিশনার স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ভারত থেকে যত পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি হবে তার প্রতিটি চালান পেট্রাপোলে ট্রাক থেকে আনলোড করে শতভাগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেই রপ্তানির অনুমতি দেবেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।  একইভাবে বাংলাদেশ থেকে যেসব পণ্য রপ্তানি হবে সেসব পণ্যও ট্রাক থেকে পেট্রাপোলে নামিয়ে শতভাগ পরীক্ষা করা হবে।

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে প্রতিদিন পাঁচশত-ছয়শত পন্য বোঝাই ট্রাক আমদানি হয় ভারত থেকে। আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৮০ ভাগই থাকে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিজসহ বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার কাঁচামাল।

তবে হঠাৎ করেই ভারতীয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের এমন নির্দেশনার কারণে বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি বানিজ্যে বড় ধরনের ধ্বস নামার আশংকা করছেন ব্যবসায়ীরা।

ভারতের এমন নিয়মের কারনে উভয় দেশের ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা কাজ করছে। বর্তমানে ভারতের পেট্রাপোল বন্দর ও কালিতলা পার্কিং এলাকায় প্রায় ৫ হাজার পণ্য বোঝাই ট্রাক আটকে আছে যত্রতত্র। ফলে রাজস্ব আদায়েও বড় ধরনের ধ্বস নামার আশংকা করছেন ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। 

পেট্রাপোল বন্দর ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের আগে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া এতদিন ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে পরীক্ষা করা হতো না। একই নিয়মে বেনাপোল থেকেও রপ্তানি পণ্য ভারতে যেত।

“এতে পণ্য খালাস একদিকে যেমন কঠিন হয়ে পড়বে তেমনি আমদানি খরচও বেড়ে দ্বিগুণ হবে। যার প্রভাব পড়বে দেশীয় বাজারে।”

তিনি বলেন, কিন্তু হঠাৎ করে পেট্রাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বন্দর ব্যবহারকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, আমদানি-রপ্তানি পণ্যের চালান খালাস করে শতভাগ পরীক্ষার পর পেট্রাপোল বন্দরে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের পেট্রাপোল বন্দর এলাকায় বিভিন্ন অব্যবস্থাপনায় এমনিতেই একটি পণ্যের চালান ভারত থেকে আমদানি হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত আসতে ১৫ দিন সময় লেগে যায়। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পেট্রাপোল বন্দরে এবার পণ্য চালান শতভাগ পরীক্ষাতে এ ভোগান্তি আরও দ্বিগুণ বাড়বে।

এতে পণ্য খালাস একদিকে যেমন কঠিন হয়ে পড়বে তেমনি আমদানি খরচও বেড়ে দ্বিগুণ হবে। যার প্রভাব পড়বে দেশীয় বাজারে। বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি করেছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ভারতের কাস্টমসের নতুন নিয়মের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চিঠি পাননি বেনাপোল কাস্টমস। এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভারতের এ নিয়ম চালুতে দ্রুত আমদানি বাণিজ্য সম্পাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। আর এর জের পড়বে বাজারে।

উল্লেখ্য, বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতের সাথে প্রতিবছর ৩০ হাজার কোটি টাকার বানিজ্য সম্পাদন হয়ে থাকে। সরকারের প্রতি বছর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়।

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা। জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গত ৬ মাসের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। আদায় হয়েছে মাত্র ২ হাজার ৪৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। ঘাটতি রয়েছে ৬০৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে