ফরিদপুরে মধুখালী উপজেলার কৃতি সন্তান বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের ৪৮ তম শাহাদাৎ বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে আজ শনিবার বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘরে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে দিবসটির সূচনা করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের বড় বোন জাহানারা বেগম।
এ উপলক্ষে এক আলোচনা সভা জাহানারা বেগমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোস্তফা মনোয়ার, কামারখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান বিশ্বাস বাবু, সাইদুর রহমান প্রমুখ।
আলোচনা শেষে স্থানীয় মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মসজিদের পেশ ইমাম মো. হাবিবুর রহমান। পরে উপস্থিত সকলের মধ্যে তবারক বিতরণ করা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মুন্সি আব্দুর রউফ তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের আগে তিনি চট্টগ্রামে ১১ উইং-এ চাকরিরত ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি মাঝারি মেশিনগান ডিপার্টমেন্টের ১নং মেশিনগান চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি-মহালছড়ি জলপথে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। এই জলপথ দিয়ে পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনীর চলাচল প্রতিরোধের দায়িত্ব পরে তার কোম্পানির উপর। কোম্পানিটি বুড়িঘাট এলাকার চিংড়িখালের দুই পাড়ে অবস্থান নিয়ে গড়ে তুলে প্রতিরক্ষা ঘাঁটি।
অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারাও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পরিখায় অবস্থান নিয়ে নেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনীর গোলাগুলির তীব্রতায় প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যায় এবং তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক অবস্থান চিহ্নিত করে ফেলে।
যুদ্ধের এই পর্যায়ে প্রতিরক্ষা ঘাঁটির কমান্ডার আব্দুর রউফ বুঝতে পারেন, এভাবে চলতে থাকলে ঘাঁটির সকলকে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে মৃত্যুবরণ করতে হবে। তিনি তখন কৌশলগত কারণে পেছনে যাবার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সিদ্ধান্ত সৈন্যদের জানানো হলে সৈন্যরা পিছু হটতে থাকে। পাকিস্তানি বাহিনী তখন আরও এগিয়ে আসে।সবাই এক সঙ্গে পিছু হটতে থাকলে এক সঙ্গে সকলকে মৃত্যুবরণ করতে হতে পারে ভেবে আব্দুর রউফ পিছু হটেননি।
সহযোদ্ধাদের পিছু হটার সুযোগ করে দিতে নিজ পরিখায় দাঁড়িয়ে অনবরত গুলি করতে থাকেন পাকিস্তানি স্পিড বোটগুলোকে লক্ষ্য করে। পাকিস্তানি সেনাদের বিরুদ্ধে একা কৌশলে লড়ছিলেন তিনি। ৭টি স্পিড বোট একে একে ডুবিয়ে দিলে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দুটি লঞ্চ নিয়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়। লঞ্চ দুটো পিছু হটে রউফের মেশিনগানের গুলির আওতার বাইরে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নেয়।
পাকিস্তানি বাহিনী এরপর লঞ্চ থেকে মর্টারের গোলাবর্ষণ শুরু করে। মর্টারের গোলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা রউফের একার পক্ষে সম্ভব ছিল না। একটি মর্টারের গোলা তার বাঙ্কারে এসে পরে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর আগে সহযোগী যোদ্ধারা সবাই নিরাপদ দূরত্বে পৌঁছে যেতে পেরেছিল। সেদিন আব্দুর রউফের আত্মত্যাগে তার কোম্পানির প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধার জীবন রক্ষা পায়।