অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন বিখ্যাত তামিল অভিনেত্রী রাধিকা শরতকুমার। তিনিও শ্রীলঙ্কার সিনামন গ্রান্ড হোটেলে ছিলেন। বোমা হামলার সামান্য আগেই তিনি বেরিয়ে পড়েন সেখান থেকে।
এ বিষয়ে ১৪ লাখ টুইটার অনুসারীর কাছে তিনি লিখেছেন, আমি কলম্বোর সিনামন গ্রান্ড হোটেল ত্যাগ করার পর পরই সেখানে বোমা হামলা হয়েছে। এই ভয়াবহতা বিশ্বাস করতে পারছি না।
এ নিয়ে টুইট করেছেন তার স্বামী, অভিনেতা ও ভারতে তামিল রাজনৈতিক দল দ্য অল ইন্ডিয়া সামাথুভা মাক্কাল কাটছি দলের প্রতিষ্ঠাতা আর শরতকুমারও।
তিনি বলেছেন, ভয়াবহ এক সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে কলম্বোতে। এটা নিন্দনীয়। নিরপরাধ যেসব মানুষ প্রাণ হরিয়েছেন তাদের প্রতি আমাদের হৃদয় নিঙরানো ভালোবাসা।
শ্রীলঙ্কায় ইস্টার সানডেতে গির্জা, অভিজাত হোটেল ও রাজধানীর কলম্বোর বাইরে দুটিসহ মোট আটটি সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। প্রায় এক দশক আগের রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধের পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে ভয়াবহ এ হামলায় আরও কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন।
দেশটির এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, গত এক দশক আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি বৃহত্তম সহিংস ঘটনা। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা এ সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে উল্লেখ করে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান উইজিওয়ার্দেনা সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত সাতজনকে আটক করা হলেও এখন পর্যন্ত কেউ হামলার দায় স্বীকার করেনি।
এদিকে ভয়াবহ হামলার পর প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, এ সহিংসতার কারণে দেশ ও দেশের অর্থনীতিতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে।
তিনি আরো বলেন, তার সরকার ‘রবিবারের হামলার জন্য’ দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ‘প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে প্রয়োজনীয় সকল ক্ষমতা’ ব্যবহার করবে।
দেশটির নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, হামলার সময় খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ইস্টার সানডে উপলক্ষে গির্জায় প্রার্থনা চলছিল। হামলায় দুটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে সন্দেহ তাদের।
এর আগে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে পৌনে ৯টার মধ্যে কলম্বোর কোচ্চিকাদে এলাকার সেইন্ট নেগম্বোর সেইন্ট সেবাস্টিয়ানের গির্জা এবং বাট্টিকালোয়ার জিয়ন গির্জায় ইস্টার সানডের প্রার্থনা চলাকালে বোমা হামলা চালানো হয়।
এছাড়া কাছাকাছি সময়ে রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত তিনটি পাঁচ তারকা হোটেলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটে। হোটেলগুলো হচ্ছে শাং রিলা, সিনামন গ্র্যান্ড ও কিংসবেরি হোটেল। গির্জা ও অভিজাত হোটেলে হামলার পরে দেহিওলা গেস্টহাউজে সপ্তম এবং রাজধানী কলম্বোর অদূরে দেমাতাগোডায় অষ্টম বোমা হামলার ঘটনাটি ঘটে।
খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের জন্য খুবই আনন্দের ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন ইস্টার সানডে। খ্রিস্টান ধর্মের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন, এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্টের পুনরুত্থান হয়েছিল। এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা জনগণকে ভীত না হয়ে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে এখনও কেউ এই হামলার দায় স্বীকার করেনি। ন্যাশনাল হাসপাতালের মুখপাত্র ডা. সামিন্দি সামারাকুন এপিকে জানান, আহতদের কলম্বোর প্রধান হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বোমার প্রচণ্ড শব্দে আশপাশের এলাকার কয়েকটি ভবন কেঁপে ওঠে। অনেক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের অ্যাম্বুলেন্স যোগে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেন্ট সেবাস্তিয়ান্স গির্জা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ থেকে সাহায্যের জন্য আবেদন জানিয়েছে। শ্রীলঙ্কার নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, তারা হামলার বিস্তারিত জানতে তদন্ত করছেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে এলাকাগুলোর সকল গির্জা বন্ধ করে দিয়েছে।