শ্রীলঙ্কায় রোববার খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের ইস্টার সানডে চলাকালে গির্জা এবং বিলাসবহুল হোটেল ও অন্যান্য স্থাপনায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯০ জনে।
পুলিশের বরাত দিয়ে ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গতকাল রাত পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ছিল ২০৭ জন।
রোববার সকাল পৌনে নয়টার দিকে শ্রীলঙ্কার ছয়টি স্থানে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। তাতে নিহত হয়েছে দুই শতাধিক মানুষ। তাছাড়া এই ছয় হামলার তিন থেকে চার ঘণ্টা পর আরও দুটি স্থানে হামলার ঘটনা ঘটে।
দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়া ছাড়াও আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন প্রায় ৫০০ জন। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিদেশি নাগরিক নিহত হয়েছে ৩৫ জন।
শেখ সেলিমের নাতি জায়ান নিহত
শ্রীলঙ্কায় সিরিজ বোমা হামলায় সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরী (৮) মারা গেছে (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার রাতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে ব্রুনেই সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কায় বোমা বিস্ফোরণে শেখ সেলিমের জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স আহত হয়েছেন এবং নাতি জায়ান চৌধুরী নিখোঁজ হয়েছে।
শেখ সেলিমের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে পরিবারের সদস্যরা কলম্বোর উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন।
সাংসদ শেখ সেলিম আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই। সেলিমের মেয়ে শেখ আমেনা সুলতানা সোনিয়া তার স্বামী মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও দুই ছেলেকে নিয়ে শ্রীলঙ্কায় বেড়াতে গেছেন। তারা উঠেছিলেন কলম্বোর পাঁচ তারকা একটি হোটেলে।
রোববার সকালে ইস্টার সানডের প্রার্থনার মধ্যে শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে বোমা হামলা হয়। এর মধ্যে হামলার শিকার একটি হোটেলের নিচতলার রেস্তোরাঁয় সকালের নাস্তা করতে গিয়েছিলেন প্রিন্স ও তার বড় ছেলে জায়ান চৌধুরী। ছোট ছেলে জোহানকে নিয়ে শেখ সোনিয়া ওই সময় হোটেলের কক্ষে ছিলেন।
বোমা হামলায় প্রিন্স আহত হন এবং ছেলে জায়ান নিখোঁজ হয়। পরে জায়ানের মৃত্যু খবর পাওয়া যায়।
নিন্দা জানালেন এরদোয়ান-ইমরান
শ্রীলংকায় ভয়াবহ বোমা হামলা ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মুসলিম বিশ্বের এই দুই নেতা টুইট বার্তায় তাদের শোক জানান।
শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলার নিন্দা জানিয়ে এরদোয়ান এক টুইটবার্তায় লিখেছেন, ‘শ্রীলংকাতে ইস্টার সানডে পালনের সময় যে সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে, আমি কঠোর ভাষায় তার নিন্দা জানাচ্ছি। এটা মানবতার ওপর আঘাত।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘তুরস্কের জনগণের পক্ষ থেকে আমি সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার এবং শ্রীলংকার জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এই ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন, আশা করছি তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করবেন।’
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ছাড়াও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান হামলার নিন্দা করে টুইটারে শোক জানিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘শ্রীলঙ্কায় এমন মর্মান্তিক হামলায় মূল্যবান সব জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া শত শত মানুষ আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি।’
পাক প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শ্রীরঙ্কান ভাইদের জন্য আমার গভীর সমবেদনাঅ। এমন পরিস্থিতিতে শ্রীলংকার সাথে সম্পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করছে পাকিস্তান।’
এদিকে বোমা হামলার ঘটনায় সমগ্র শ্রীলঙ্কায় কারফিউ জারি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। সেনবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রীলঙ্কার এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞের নিন্দা করে শোক প্রকাশ করেছেন বিশ্ব নেতারা। তারা শ্রীলঙ্কাকে যেকোনো সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন।
ইস্টার সানডের সকালে তিনটি গির্জা ও তিনটি অভিজাত হোটেলে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুপুরের পর কলম্বোর আরও দুটি স্থানে বোমা হামলা হয়েছে। যার চারটি রাজধানী কলম্বোতে। বাকি দুটির একটি রাজধানীর অদূরে অন্যটি পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশে বাত্তিকোলায়।