জাহালমের মামলায় হাই কোর্টের আদেশ স্থগিত

ডেস্ক রিপোর্ট

জাহালম
ফাইল ছবি

বিনা অপরাধে তিন বছর কারাভোগের পর হাই কোর্টের আদেশে মুক্ত হওয়া টাঙ্গাইলের জাহালমের বিষয়ে হাই কোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত। মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুদক সংক্রান্ত মামলা শুনানির ক্ষেত্রে বিচারপতি নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে দুদকের করা একটি আবেদনের প্রেক্ষিতে চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান এই আদেশ দেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ এসেছে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। এরফলে এ সংক্রান্ত মামলার সমস্ত কার্যক্রম স্থগিত থাকবে, তবে জাহালমের জামিনের ক্ষেত্রে এ আদেশ কোনো সমস্যা হবে না বলেও জানিয়েছেন তিনি।

universel cardiac hospital

দুদক সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তির জন্য হাই কোর্টে স্পেশাল বেঞ্চ আছে। এ সংক্রান্ত বিশেষ মামলা নিষ্পত্তির জন্য বিশেষ বেঞ্চও নির্ধারণ করা থাকে। নির্ধারিত এসব বেঞ্চের বাইরে অন্য কোনো বেঞ্চ এ সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে পারে না। এ বিষয়ে আপিল বিভাগের একটি রায়ও আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই চেম্বার আদালত আদেশ দিয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা জালিয়াতির অভিযোগে আবু সালেক নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ৩৩টি মামলা করে দুদক। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তাদের ভুলে সালেকের বদলে তিন বছর ধরে কারাগারে কাটাতে হয় টাঙ্গাইলের জাহালমকে।

এ বিষয়ে জানুয়ারির শেষ দিকে জাহালমের ওপর গণমাধ্যমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হলে সেটি সেদিন বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চের নজরে আনেন আইনজীবী অমিত দাশ গুপ্ত। এরপর ২৮ জানুয়ারি হাই কোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে দুদকের ব্যাখ্যা জানতে কমিশনের চেয়ারম্যানের মনোনীত প্রতিনিধিসহ চারজনকে তলব করে।

কারাগারে থাকা ‘ভুল’ আসামি জাহালমকে কেন অব্যাহতি দেয়া হবে না এবং তাকে মুক্তি দিতে কেন ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত একটি রুলও জারি করা হয়। এরপর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ দুঃখ প্রকাশ করে ভুলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আদালতের আদেশে ৩ ফেব্রুয়ারি রাতে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান জাহালম।

পাটকল শ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাগারে থাকার ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি ছিল কি না- তা খতিয়ে দেখতে একটি কমিটি করে দুদক। তবে হাই কোর্টে দুদকের পক্ষ থেকে যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়, সেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের ওপর দায় চাপিয়ে বলা হয়, ব্যাংকগুলোর অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করেই দুদকের তদন্ত কর্মকর্তারা অভিযোগপত্র দিয়েছিলেন।

কিন্তু দুদকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট না হয়ে ৩৩টি মামলার প্রাথমিক তথ্য বিবরণী (এফআইআর), অভিযোগপত্র (সিএস) সহ যাবতীয় নথি তলব করে হাই কোর্ট। দুদকের কার্যক্রমে উষ্মা প্রকাশ করে আদালত বলে, ইঁদুর ধরতে না পারলে সেই বিড়ালের প্রয়োজন নেই।

জাহালম কেমন আছেন, কীভাবে জীবনযাপন করছেন- তার মুখ থেকে তা শুনতে তাকে আদালতে নিয়ে আসতে আইনজীবী অমিত দাস গুপ্তকে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্টের এই বেঞ্চ। সে অনুযায়ী জাহালম ১৭ এপ্রিল আদালতে হাজিরও হয়েছিলেন।

কিন্তু দুদক এক মাসেও নথি দাখিল করতে না পারায় ২ মে শুনানির পরবর্তী তারিখ রেখে ওই সময়ের মধ্যে ৩৩ মামলার নথি ও দুদকের প্রতিবেদন জমা দিতে বলে আদালত। পাশাপাশি আসামি না হয়েও জাহালমের কারাভোগের জন্য কে বা কারা দায়ী তা দেখতে দুদকের কাছে প্রতিবেদন চায় হাই কোর্ট।

ওইদিনই আদালত জানায়, ২ মে দুদক তাদের প্রতিবেদন দিলে তখনই হাই কোর্ট জাহালমের মুখ থেকে তার কথা শুনবে। এরপর দুদক গত ২১ এপ্রিল হাই কোর্টের ওই বেঞ্চের এখতিয়ার চ্যালেঞ্জ করে চেম্বার আদালতে যায়। ওই আবেদনের শুনানি করেই মঙ্গলবার স্থগিতাদেশ দিলেন চেম্বার বিচারপতি।

শেয়ার করুন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে